বাসস
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৭

ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে নীলফামারীর ৬ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ

॥ ভুবন রায় নিখিল ॥
নীলফামারী, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : জেলায় দিগন্তজোড়া মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে সরিষার হলুদ ফুলের ঝলমলে হাসি। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে জেলার কৃষকরা এবার আবাদ করেছে ৬ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমিতে। যা দিয়ে এ জেলার ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটাবে ১৪ ভাগ।
সরিষার ব্যাপক চাষের দিগন্তজোড়া ৩০০ বিঘার একটি প্লট দেখা গেছে সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে। সে গ্রামের ১৪০ জন কৃষক সরিষার আবাদ করেছেন ওই প্লটে।
ওই গ্রামের কৃষক আব্দুর রশীদ (৫৫) গতবছর সরিষার আবাদ করেছিলেন তিন বিঘা জমিতে। ভোজ্য তেলের দাম বাড়ায় এবার একই প্লটে আবাদ করেছেন ১৪ বিঘায়। একইভাবে তিনিসহ পাশপাশি জমিতে ১৪০জন কৃষক সরিষার আবাদ করেছেন ৩০০ বিঘা জমিতে। এমন আবাদে সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে বিস্তির্ণ এলাকা। তাদের এমন আগ্রহে কুন্দপুকুর ইউনিয়নটির পাটকামুড়ি, আরাজীরামকলা, কুন্দপুকুর ও আঙ্গারপাড়া গ্রামে বিচ্ছিন্নভাবে আরো আবাদ ছড়িয়েছে ৩০০ বিঘা। সব মিলে ওই ইউনিয়নে এবার সরিষার আবাদ হয়েছে ৬০০ বিঘা জমিতে।
আব্দুর রশিদ জানান, সরিষার আবাদে বাড়তি তেমন শ্রমের প্রয়োজন হয়না। আমন ধান এবং বোরো ধানের মাঝামাঝি সময়টাতে সরিষার আবাদ করা যায়। আগে এসময়ে অধিকাংশ জমি খিলে পড়ে থাকতো। খিলে পড়ে থাকা ওই জমিতে এটি একটি বাড়তি ফসল। সরিষার আবাদের ফলে জমি উর্বর হয়। এতে করে বোরোর আবাদে তেমন চাষ লাগে না। সার, নিড়ানীও লাগে কম। বোরো ধানের ফলনও ভালো পাওয়া যায়। এবার কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় অন্যান্য বছরের তুলনায় কৃষকরা বেশী পরিমাণে আবাদ করেছে সরিষা।
একই গ্রামের কৃষক মোসাব্বের রহমান (৪৫) বলেন,‘আমন এবং বোরো আবাদের মাঝামাঝি সময়টাতে জমি পড়ে থাকে। দুই ফসলের মাঝের এ সময়টাতে সরিষার আবাদ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন।’
তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষার আবাদে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা। ভালো বীজ ও সময়মতো সার প্রয়োগ করা হলে ফলন পাওয়া যায় ৫ মণের অধিক। প্রতিমণ ষরিসার বাজারমূল্য ৩ হাজার টাকা হলে পাওয়া যায় ১৫ হাজার টাকা। এতে করে প্রতি বিঘায় কৃষকের বাড়তি লাভ হবে অন্তত ১০ হাজার টাকা। সরিষা বিক্রির ওই টাকা দিয়ে আনায়াসে বোরো আবাদের খরচ মেটানো সম্ভব হয়। এছাড়া সরিষার গাছ জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাতে পরিবারের জ¦ালানী সাশ্রয় হয়।
কৃষক সফিয়ার রহমান এবার সরিষা আবাদ করেছেন ১২ বিঘা জমিতে। তিনি বলেন,‘বোরো আবাদের জন্য জমি চারবার চাষ করার লাগে। সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদের জন্য একবার চাষ করলেই হয়। সরিষার গাছের পাতা পড়ে জমির জৈব সারের ঘাটতি মিটে। এতে করে জমিতে সার কম লাগে, ধান উৎপাদন বেশী হয়। সেচের পরিমাণ কম লাগে, জমিতে আগাছা কম হয়।’
কাচারীপাড়া গ্রামের ওই প্লটটি সম্প্রতি পরিদর্শণ করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এসএম আবুবকর সাইফুল ইসলাম। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রশিদুল ইসলাম ও আবু তালেব প্রমুখ।
পরিদর্শণ শেষে উপ-পরিচালক ড. এসএম আবুবকর সাইফুল ইসলাম জানান, জেলায় গতবছর সরিষার আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে। এবার ৬ হাজার ৭৭৭ হেক্টর চাষ হয়েছে। এতে করে বৃদ্ধি পেয়েছে এক হাজার ২২২ হেক্টর জমিতে। এ পরিমাণ আবাদ থেকে ৯ হাজার ১০০ টন সরিষা উৎপাদন হবে। যা থেকে ভৈজ্যতেল পাওয়া যাবে ৩৬ লাখ ৪০ হাজার লিটার। এ পরিমাণ উৎপাদন থেকে জেলার প্রায় ২৩ লাখ জনসংখ্যার ১৪ ভাগ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে (মাথাপিচু ৩৫ গ্রাম হিসেবে)। জেলার ৪০ ভাগ তেলের চাহিদা মেটাতে ২০ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ প্রয়োজন। এতে করে আরো ১৩ হাজার জমিতে আবাদ বাড়াতে হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সে মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ভৈজ্য তেলের ঘাটতি মেটানোর মধ্য দিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
তিনি আরও জানান, দেশে ভৈজ্য তেলের যে চাহিদা তার আট থেকে ১২ ভাগ দেশে উৎপাদন হয়। ৮০ থেকে ৯২ ভাগ তেল আসে বাইরে থেকে। এতে সরকারের প্রতিবছর ২৫ থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সেটি বেড়ে ২৮ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। প্রধানমন্ত্রী এবং কৃষিমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় তিন বছরের মধ্যে সারা দেশে ৪০ ভাগ ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর একটি কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এটি তারই একটি অংশ।