শিরোনাম
ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস): একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৭০)কে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শনিবার রাতে রাজধানীর ডেমরা এলাকায় একটি বস্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সেখানে তিনি আতœগোপনে ছিলেন।
গ্রেফতারকৃত আবু মুসলিম গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার পূর্ব ঝিনিয়া গ্রামের মৃত দছিম উদ্দিন ওরফে ছলিমের পুত্র।
আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতা বিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিস্থ র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী ১৯৭১ সালে গঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের একজন অন্যতম সংগঠক এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানা জামায়াত ইসলামীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে অত্র এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাত।
তিনি জানান, ১৯৭১ সালের জুলাই মাস থেকে শান্তি কমিটির গাইবান্ধা জেলাপ্রধান মওলানা মমতাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে আটককৃত আসামিসহ আরও অনেকে মিলে অত্র এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন।
র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার সাংবাদিকদের জানান, ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শান্তি কমিটির সদস্য মো. আব্দুর রহিম মিয়া এবং আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে আবু সালেহ, আব্দুল লতিফ, রুহুল আমিন, নাজমুলসহ আরও কয়েকজন কুখ্যাত রাজাকার এবং পাকিস্তানি আর্মিদের একটি দল নিয়ে সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে মালিবাড়ি গ্রামের গণেষ চন্দ্র বর্মনের বাড়িতে হামলা করে লুটপাট এবং বাড়ির সদস্যদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে তারা অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এরপর তারা গণেষ চন্দ্র বর্মনকে উঠিয়ে নেয়ার জন্য উদ্ধত হলে তার স্ত্রী, পুত্র, বন্ধু আকবর আলী এবং প্রতিবেশি মোহাম্মদ আলী ও মনসুর আলী এগিয়ে এলে তাদের সকলকে বেধড়ক মারপিট করে এবং একপর্যায়ে তাদেরকে আটক করে নিকটবর্তী দরিয়াপুর ব্রিজে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গণেষ চন্দ্র বর্মনকে হাত-পা বেঁধে মুখমন্ডল ও সারা শরীরে নৃশংসভাবে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে হামলাকারীরা।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, এরপর তার মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয় এবং মৃতদেহের সাথে ইট ও পাথর বেঁধে এমনভাবে নদীতে ডুবিয়ে দেয় যাতে করে লাশটি ভেসে ওঠতে না পারে। পরে তারা আকবর আলী, মোহাম্মদ আলী এবং মনসুর আলীকে কামারজানি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং নির্যাতন করে। আকবর আলীকে তারা উপস্থিত অপর দুই ব্যক্তির সামনে বৈদ্যুতিক শক এবং নির্যাতনের মাধ্যমে ক্যাম্পেই হত্যা করে। পরের দিন বিকালে অপর দুই ব্যক্তি মনসুর আলী এবং মোহাম্মদ আলীকে তারা ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেয়ার পর এরা কোন রকম পালিয়ে জীবন বাঁচায়।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় কামারজানি আর্মি ক্যাম্পে হত্যাকান্ডের শিকার আকবর আলীর পুত্র আনিছুর রহমান বাদি হয়ে ২০১৩ সালে গাইবান্দার একটি আদালতে আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলীসহ কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করা হয়। বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে তিনি কখনোই আদালতে হাজির হননি। মামলা দায়েরের পর ২০১৩ সাল থেকেই তিনি নিজ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এ আসামিকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। এ মামলার অভিযুক্ত ৫ জনের মধ্যে বর্তমানে ১ জন জর্ডানে অবস্থানরত, ১ জন কারাগারে, ২ জন পলাতক রয়েছে এবং ১ জন আসামী পলাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
র্যাব জানিয়েছে, বিগত ৬ মাসে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীসহ বিভিন্ন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের বিরুদ্ধে ৯৯ টি অভিযান চালিয়ে ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামী আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলীকে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।