বাসস
  ০১ মার্চ ২০২৩, ২০:৫৪

চট্টগ্রামে র‌্যাবের অভিযানে জঙ্গি সংগঠনের চার সদস্য আটক

চট্টগ্রাম, ১ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার চারজন জঙ্গিকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তারা হলেন- হোসাইন আহমদ (২২), নিহাল আব্দুল্লাহ (১৯), আল আমিন (২২) ও আল আমিন প্রকাশ পার্থ কুমার দাস (২১)।
বুধবার বিকেলে বিষয়টি চট্টগ্রাম র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নুরুল আবছার নিশ্চিত করেন। এরআগে মঙ্গলবার গভীর রাতে পটিয়া উপজেলার বাইপাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে তিনি জানান।
র‌্যাব জানায়, আটককৃতরা সহপাঠি, নিকটাত্মীয়, স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তি বা বন্ধু বান্ধবের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে। বিভিন্ন সময়ে জামাতুল আনসারের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের ভিডিও দেখানো, রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে তাদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলত। গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন সময়ে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়।
হিজরতের প্রথমে তাদেরকে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার চর এলাকা, ঢাকা ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শারীরিক কসরত, জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, তাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করা হত। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে সমতল হতে পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হয় এবং শুরা সদস্য রাকিব এর মাধ্যমে তারা পার্বত্য অঞ্চলের বাকলাই পাড়া হয়ে কেটিসি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে পৌঁছায়। পার্বত্য অঞ্চলে তারা বিভিন্ন ধরণের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা আরও জানায়, বিভিন্ন সময় কেএনএফ এর নাথান বম, বাংচুং, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল এবং কাকুলীসহ অনেকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আসত। প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ তারা অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ এর সদস্যদের নিকট হতে সংগ্রহ করত এবং কেএনএফ এর সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে উক্ত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করত বলে জানায় তারা।
পরবর্তীতে পার্বত্য অঞ্চলে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা সংগঠনের আমীরের নির্দেশে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পার্বত্য অঞ্চলে আত্মগোপন করে। তারা ছোট ছোট গ্রুপে সাইজামপাড়া, মুন্নুয়াম পাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষং পাড়া, তেলাং পাড়াসহ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে।
গত চারদিন পূর্বে তারা সমতলে আসার উদ্দেশ্যে পাহাড়ের গহীন থেকে হেঁটে বান্দরবানের টঙ্কাবতী এলাকায় আসে। পরবর্তীতে সিএনজিযোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আসার পথে পটিয়া বাইপাস এলাকা থেকে চার জনকে আটক করা হয় এবং অভিযানকালীন সময়ে আরও ৪-৫ জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নুরুল আবছার বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের ফলে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে বের হয়ে সমতলে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।