বাসস
  ২১ মার্চ ২০২৩, ১৯:৩০

তথ্য প্রযুক্তিতে জেন্ডার সমতা আনতে চাই অনলাইন নিরাপত্তা : বিশেষজ্ঞ অভিমত 

ঢাকা, ২১ মার্চ ২০২৩ (বাসস) : তথ্য প্রযুক্তিতে জেন্ডার সমতা আনতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে মেয়েদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও সুপারিশ করেছেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগণ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ রাজধানীর সুফিয়া কামাল ভবনের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত “জেন্ডার সমতায় তথ্য প্রযুক্তি” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এই বিশেষজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করা হয়। 
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স এবং মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল বলেন, “আমাদের দৈনন্দিন জীবন এবং ভার্চুয়াল জীবনকে এখন আর আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। সমাজে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে নারীর অংশগ্রহণও  তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। কিন্তু  তা আশানুরূপ নয়। তাই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।” 
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি  ডা. ফওজিয়া মোসলেম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে  অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ডাটা সফটের প্রতিষ্ঠাতা  চেয়ারম্যান তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মাহবুব জামান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের  ইলেকট্রিক্যাল এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এর অধ্যাপক ড. নোভা আহমেদ,  বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, মেট্রোনেট বাংলাদেশ লি. এর সিইও  সৈয়দ আলমাস কবীর এবং ওয়েব ডেভেলপার আ.স.ম. হাবিবুর রহমান।  বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা  দোলন চন্দ্র শীল ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা অর্জনে তথ্য ও প্রযুক্তির ভূমিকা ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। 
মাহবুব জামান কোভিড ১৯ মোকাবেলায় দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেন, এটি আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। যা আমাদের তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। 
ড. নোভা আহমেদ বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সাথে মানুষের যোগাযোগ আছে কি নেই, এই বিষয়টিই মানুষের মনোভাব ও জীবনযাত্রার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।  তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার কোভিডকালে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। এসময় নারীরা অনলাইনে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে উৎসাহিত হয়েছে। এতে অনলাইন প্রান্তিক মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের নির্ভরযোগ্য স্থান হয়ে উঠেছে। তিনি তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহারের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নারীদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। 
অধ্যাপক লাফিফা জামাল বলেন, তথ্য প্রযুক্তিতে মেয়েদের আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্বেও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও মেয়েদের ওপর ভরসা করতে পারেন না। তাদের মনোভাবটা এমন যে এই জটিল কাজগুলো মেয়েরা পারবে না। কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তথ্য প্রযুক্তিতেও মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে    কোনো অংশে কম নয়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিসংখ্যান তথ্যে দেখা যায়, শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ মেয়ে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে পড়ছে। কিন্তু পেশায় যায় মাত্র ১২ থেকে ১৫ ভাগ। এর কারণ তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে পড়ালেখার পরও সামাজিক প্রতিকুলতার কারণে মেয়েরা পেশায় থাকতে পারে না। তিনি তথ্য প্রযুক্তিতে নারীর সমতা নিশ্চিত করতে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।  
ডা. ফৌজিয়া মোসলেম তথ্য প্রযুক্তির সুফল পেতে নারী বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ডিজিটাল প্লাটফর্মে নারীর প্রতি সহিংসতা কাটাতে আমাদের নতুন কর্মপথ নির্ধারণ করতে হবে।  
আলোচনা সভায় তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও মহিলা পরিষদ নেতৃবৃন্দ  অংশ নেন।