বাসস
  ০৭ মে ২০২৩, ১১:৩৮

পান চাষে স্বাবলম্বী কুড়িগ্রামের পান্ডুলের ৩শ চাষি

কুড়িগ্রাম,৭ মে, ২০২৩ (বাসস) : একটি পানের বরজ থাকলেই সারা বছরের বাজার খরচ নিয়ে আর চিন্তা থাকেনা। উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি। তাই   বছরের পর বছর বংশ পরম্পরায় পান চাষ করেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের মানুষ। শুধু এ ইউনিয়নেই প্রায় ৩শ পান চািষ  ৩ শতাধিক বরজে পান চাষ করে স্বাবলম্বী  হয়েছেন। এ সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আশেপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে পান চাষ।
সরেজমিন দেখা গেছে, পান্ডুল ইউনিয়নের সাতঘড়িপাড়া, আপুয়ারখাতা, খামার, মহিষমুড়ি, কাগজীপাড়া, ঝাড়ভাঙা, পান্ডুলসহ অনেক গ্রামে কৃষকরা গড়ে তুলেছেন পানবরজ। আবাদি জমি কিছুটা উঁচু করে পান গাছ রোপণ করেছেন। চারার উপর বাঁশ ও খড়ের মাচা তৈরি করেছেন।
আপুয়ারখাতা খামার গ্রামের পানচাষি  নুর ইসলাম জানান, তিনি ৪০ শতক জমিতে পান চাষ করেছেন। এ জমিতে ২৫ বছর আগেই এ বরজ তৈরি করেন তার বাবা। যাদের পান বরজ থাকে তাদেরকে বলা হয় বারাই। তার বাবা শামসুল বারাই, দাদা শরফুদ্দিন বারাইসহ পূর্ব পুরুষদের নামের সঙ্গে বরাই শব্দটি যুক্ত থাকায় এ এলাকায় বহু বছর ধরে পান চাষের প্রমাণ মেলে। এমনকি পান এবং হাটে পান বিক্রির ডুল (ডালি) থেকে এ এলাকার নামকরণ পান্ডুল হয়েছে বলে জানান তিনি। এ জমিতে তিনি বছরে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে দেড় লাখ টাকারও বেশি পান বিক্রি করেন বলে জানান তিনি। তার ভাই নুর হাদীর বরজ রয়েছে ১৩ শতক জমিতে।  তিনি জানান, রংপুর অঞ্চলে পান সুপারির চাহিদা বেশি। দক্ষিণাঞ্চল থেকে মুলত পানের সরবারহ আসলেও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পান দিয়ে অনেক চাহিদা পূরণ হচ্ছে। বিশেষ করে পান্ডুলের পান স্থানীয় জাতের, তাতে খৈল ব্যবহার করা হয় এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার হয় সীমিত। তাই এ পান বেশি সুস্বাদু বলে জানান তিনি।
সাতঘড়ি পাড়ার পানচাষি এরশাদুল হক জানান, পান চাষে ঝক্কি ঝামেলা কম। বাঁশ, খড়, মাটি, খৈল ও গোরব ব্যবহার করা হয় বরজ তৈরিতে । সামান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। রোগ ব্যাধি দেখা দিলে খুব সীমিত পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করা হয় মাঝেমধ্যে।
পানচাষিরা  জানান, পান বিক্রির জন্য কোথাও যেতে হয়না। স্থানীয় পান্ডুল বাজারে সপ্তাহে দুদিন খুব ভোরে পানের বাজার বসে। ৮০টি পান ৮০-১৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যান। তাই বাজারজাত নিয়ে কোন সমস্যা নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, জেলায় মোট ২৮ হেক্টর জমিতে ৩৯৫টি বরজ তৈরি করা হয়েছে। বছরে পানের উৎপাদন হয় ২০৫ মেট্রিক টন। এছাড়া পানের বরজের সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়াও সুপারি গাছে পান ও চুঁই ঝাল চাষের জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।