বাসস
  ০৯ মে ২০২৩, ১০:২১
আপডেট : ১০ মে ২০২৩, ০৯:১৯

গোপালগঞ্জে চলছে ধান গোলায় তোলার উৎসব

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ৯ মে,২০২৩ (বাসস) : বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটছে। এখন গোপালগঞ্জে  সোনালীধান  গোলায় তোলার উৎসব চলছে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে কৃষক ও কৃষাণী ধান কর্তন, মাড়াই সিদ্ধ ও শুকনা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।  আর এ ধান গোলায় তোলা উৎসবকে ঘিরে গোপালগঞ্জের গ্রম-বাংলা এখন মুখরিত। বদলে গেছে দৃশ্যপট। কৃষক ও কৃষাণী মাঠ থেকে পাকা ধান কেটে আনছেন। তারপর বাড়ির আঙ্গিনা , চাতাল ও খোলা প্রান্তরে মাড়াই করা হচ্ছে। মাড়াই করা ধান সিদ্ধ করে রোদে শুকানো হচ্ছে। তারপর তোলা হচ্ছে গোলায়।  গোপালগঞ্জ নি¤œ জলাভূমি বেষ্টিত জেলা। এ জেলার অধিকাংশ জমিতে বছরে একটি মাত্র ফসল বোরোধান ফলে। এ ধান দিয়েই অধিকাংশ কৃষকের সারা বছর চলে। তাই কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে কৃষক যার পর নাই চেষ্টা করছেন।
কাশিয়ানী উপজেলার হাতিয়াড়া ইউনিয়নের চান্দা বিলের রাহুথড় গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর জলাভূমি চান্দা বিলের কৃষক বিলের জমি থেকে প্রায় ৫০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন করেছেন। এখানে শ্রমিকরা কাঁচি দিয়ে ধান কেটে আঁটি বেঁধে বয়ে আনছেন। এ বিলের সড়ক সংলগ্ন জমির ধান মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে। এসব ধান বিলের ফাঁকা মাঠ, সড়ক, উঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় মাড়াই, ঝাড়াই ও শুকনা করা হচ্ছে। চান্দা বিলের কৃষক ও কৃষাণী ধান ঘরে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। নতুন ধানের  গন্ধে পুরো চান্দা বিল এখন মাতয়ারা। ধান কাটাকে কেন্দ্র করে শহরের মানুষ গ্রামে আবস্থান করছেন।  ধান গোলায় তোলাকে কেন্দ্র করে চান্দা বিলে উৎসব চলছে।  
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের সরদার বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলায় ৮১ হাজার ২২৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের  আবাদ হয়েছে। এ জেলায় বোরো ধানের  বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে বোরোধান ৫.৫ থেকে ৯.৫  মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন দিয়েছে। হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরোধানের  নমূনা শস্য কর্তন  করে এ তথ্য জানাগেছে। সেই হিসেবে এ জেলায় অন্তত ৫ লাখ ৭৫ হাজার টন ধান উৎপাদিত হবে বলে ধারণা করছি । ইতিমধ্যে ৪৭ হাজার ৮৩৮ হেক্টর জমির ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এখান থেকে কৃষক ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৭ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করেছেন। কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় প্রায় ৮৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। চলতি সপ্তহের মধ্যেই জেলার ৫ উপজেলার শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন করা হবে বলে আশাকরা হচ্ছে।
চান্দা বিলের রাহুথড় গ্রামের কৃষক নিত্য বিশ^াস (৫৫) বলেন,  আমরা চন্দা বিলের বাসিন্দা। আমাদের জমিতে বছরে একবার মাত্র বোরো ধান ফলে। তারপর সার বছর জমি পানির নীচে চলে যায়। বোরো ধানই আমাদের প্রধান ফসল। এ ফসল দিয়েই আমাদের সারা বছরের খাবার জোঁটে। বোরো  ফসলের বাম্পার ফলন পেয়েছি। এ ফসল ঘরে তুলতে সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
চান্দা বিলের বেদগ্রামের কৃষক পরিতোষ হালদার বলেন, বোরো মৌসুমের শুরুতে আমরা বিলের জমিতে ধান রোপণ করে দেই। কোন সেচ, সার ও কীট নাশক ছাড়াই ধান হয়ে যায়। তারপর আমরা ধান কেটে নিয়ে আসি। এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। সব ধান কেটে ঘরে তুলতে পারলে বছরের খাবার হয়ে যাবে। বাড়তি ১০০ মণ ধান বিক্রি করতে পারব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, এ মৌসুমে আমরা আগে থেকে ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাই। কৃষকরাও আমাদের আহবানে সাড়া দেয়। এছাড়া কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিনে ধান কাটা হয়েছে। মাঠে পর্যাপ্ত কৃষাণ ছিল তাই দ্রুত ধান কাটা সম্ভব হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৮৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রায় সব ধান কাটা শেষ হবে।
কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের  দীঘলিয়া গ্রামের কৃষক রেজাউল হক (৬০) বলেন, এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়েছেন। এ মেশিন দিয়ে ধান কাটা হয়েছে। এছাড়া কৃষি বিভাগ আমাদের বারবার ধান কাটার তাগিদ দিয়েছে। বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক এনে দিয়েছে। তাই দ্রুত ধান কাটতে পেরেছি। এখন ধান মড়াই, সিদ্ধ ও শুকনা করে ঘরে তুলছি। এ বছর আগে আগেই ধান ঘরে তুলতে পেরেছি। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের জোয়ারিয়া গ্রামের কৃষাণী হাসি লতা সরকার (৪৫) বলেন, আমাদের এলাকা নিচু। এখানে কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা যায় না। তাই কৃষি বিভাগ রিপার মেশিন দিয়ে ধান কেটে দিচ্ছে। এছাড়া তারা অন্য জেলা থেকে শ্রমিকের ব্যবস্থা করেছে। তাই আমরাও দ্রুত ধান কেটে গোলায় তুলতে পারছি।