বাসস
  ১৮ জুন ২০২৩, ১১:৩৫

জয়পুরহাটে পাগলা দেওয়ান গণহত্যা দিবস আজ

॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ১৮ জুন, ২০২৩ (বাসস) : ৪ আষাঢ় (১৮ জুন) শুক্রবার ছিল সেদিনটি। গ্রামের মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ছে লোকজন। হঠাৎ ঘটঘট শব্দের চমকে ওঠে তাকালো সবাই। খাকি পোশাক পড়া পাক সেনারা ঘিরে ফেললো মসজিদের চারপাশ। ৩০/৩৫জন মুসল্লিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে আনা প্রায় শ তিনেক লোককে পাশের পোড়া বাড়িতে সমবেত করলো। রাতে ডিউটি কেন দেয়া হচ্ছে না জিজ্ঞাসা করে পাক সেনারা। এসময় ধলাহার স্কুলের শিক্ষক বাহার উদ্দিন উর্দুতে বলে ডিউটি দিলে মুক্তিরা মারবে এবং ধরে নিয়ে যাবে। একথা শোনা মাত্র গুলি করে হত্যা করলো বাহারকে। এরপর কুদাল দিয়ে গর্ত করে নিয়ে গর্তের পার্শ্বে নিয়ে যায় আর ধারালো অস্ত্র দিয়ে মানুষ কাটা শুরু করলো বিহারী আর পাঞ্জাবীরা। আমাকেও চোট মেরে গর্তে ফেলে দিল। ভাগ্যক্রমে ঘাড়ে, গলায় না লেগে চোঁয়ালে লাগে। অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকার কিছু পড়ে হুশ হলে ( জ্ঞান ফিরলে) হামাগুড়ি দিয়ে উঠে পালিয়ে যাই পরে ভারতে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হই। ওই গর্তে বহু মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। একান্ত আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন ওই মৃত্যু কূপ থেকে ফিরে আসা চিরলা গ্রামের আবেদ আলী। এখানে হত্যার শিকার হওয়াদের মধ্যে কয়েকজন হচ্ছেন, চিরলা গ্রামের সইমুদ্দিন, পাহনন্দা গ্রামের নাজির উদ্দিন, কাইমুদ্দিন, গানা সরদার, নিধি গ্রামের সিরাজুল, চকবরকতের নিঝুম সরদার, মমতাজ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী। অনেকের নাম আজও জানা সম্ভব হয়নি।
জয়পুরহাট শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে সদর উপজেলার ভারত সীমান্ত সংলগ্ন পাগলা দেওয়ান গ্রামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক-হানাদার বাহিনী একটি শক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপন করে। সেই বাংকারে লেগে থাকা রক্তের দাগ আজও মুছতে পারেনি এলাকার নির্যাতনের শিকার হওয়া স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যরা। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধরে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় ভারতে যাবার পথে প্রায় ১০ হাজার নিরীহ নারী পুরুষ ও শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে এ পাগলাদেওয়ানে। শরণার্থীদের মধ্যে অল্প বয়স্ক সুন্দরী মেয়েদের ধরে স্থানীয় মোজাম্মেল হকের বাড়িতে রেখে পাশাবিক নির্যাতনের পর নরপশুরা তাদের হত্যা করতো। পাকিস্তানি  হানাদার বাহিনী দেশের মধ্যে নৃশংসভাবে গণহত্যা ধর্ষণ, লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ শুরু করলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে স্বাধীনতা লাভের আগ মূহুর্ত পর্যন্ত প্রাণ ভয়ে নিরীহ লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতে যেতে থাকেন। জয়পুরহাটের উপর দিয়ে পাগলাদেওয়ান হয়ে ভারত সীমান্ত নিকটবর্তী হওয়ায় বগুড়া, শিবগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, নওগাঁ ও জয়পুরহাটের শরণার্থীরা দলে দলে  ছুটে যাওয়ার পথে অতর্কিত হত্যার শিকার হয়েছে এ পাগলাদেওয়ানে। আর গর্তে ফেলে তাদের মাটি চাপা দেয়া হতো। স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে পাক সেনাদের রেখে যাওয়া শক্তিশালী বাংকারটি আজও ওই এলাকার মানুষের মনে সেই দিনের নির্মমতাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। আজ ১৮ জুন হাজারো শহীদের বধ্যভূমি পাগলাদেওয়ান গণহত্যা দিবস উদযাপন উপলক্ষে যৌথভাবে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ জয়পুরহাট শাখা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। আলোচনা সভায় সেই দিনের ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা যারা বেঁচে আছেন তারা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরবেন ভয়াবহ ঘটনার নির্মম কাহিনী বলে জানান, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ জয়পুরহাট শাখা সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের গবেষক আমিনুল হক বাবুল ।