\ আজাদ রুহুল আমিন \
বাগেরহাট, ৪ অক্টোবর ২০২৫(বাসস): নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগ মুহূর্তে মনের মতো ইলিশ মাছ কিনতে না পেরে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ক্রেতারা। গত কয়েকদিন নিম্নচাপ থাকায় জেলেরা সাগরে থাকলেও নিরাপত্তার প্রয়োজনে জঙ্গলের খালে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। যে কারণে গত কয়েকদিন সাগরে মাছ থাকলেও মাছ ধরতে পারেননি তারা।
এদিকে শনিবার মধ্যরাত (শুক্রবার দিবাগত রাত) থেকে আগামী ২২ দিনের জন্য মা ইলিশ রক্ষায় সাগরে মাছধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। গত কয়েক দিন ধরে সাগরে লঘুচাপের কারণে জেলেরা জঙ্গলের নিরাপদ খালের ভেতর আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু নদীতে জাল ফেলতে পারেনি। এদিকে গতকাল শুক্রবার ছিল এ মৌসুমে মাছ ধরার শেষ দিন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে বাগেরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে অর্ধশতাধিক মাছধরা ট্রলার ঘাটে ভিড়লেও পর্যাপ্ত রুপালি ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলেরা।
মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগ মুহূর্তে গতকাল শুক্রবার ভোর ৫ টা থেকে মধ্য রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত জেলা শহরের কেবি বাজার পাইকারি আড়তে মাছ বেচাকেনা চলে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কম দামে ইলিশ কেনার আশায় লোকজন ভিড় করলেও দেখা যায় মাছের দাম খুবই চড়া। ১ কেজির উপরে ইলিশের দাম ৩ হাজার টাকা। বাচ্চা ইলিশ ৪ টায় কেজি। দাম ৮ শ টাকা। ৬ টায় ১ কেজির দাম ৭ শ ৫০ টাকা।
ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন মাঝি মাহফুজ। তিনি ২ হাজার ইলিশ বিক্রি করেছেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া ইলিয়াছ মাঝি ইলিশ বিক্রি করেছেন মাত্র ২০ হাজার টাকার।
অথচ ট্রলারের জ্বালানি তেল, বাজার, স্টাফ খরচ আড়াই লাখ টাকার বেশি। ক্রেতারা ইলিশের স্বাদ নিতে বিক্রেতার সাথে দর দাম করে ১ কেজি বাচ্চা ইলিশ কিনছে পরিবারের সদস্যদের জন্য।
বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাট সাহেব আব্দুস সাত্তার আজ বাসসকে জানান, মাত্র ৩ দিন আগেও মাঝারি সাইজের এক পোন মাছ (৮০ টি) বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। যা গতকাল ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজার হাজার ক্রেতার উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।
পুরুষের পাশাপাশি অনেক অভিজাত পরিবারের মহিলারাও ভিড় করেন মাছের বাজারে।
মাছ কিনতে আসা গৃহিণী কোহিনুর বেগম বলেন, যতই দাম হোক ইলিশ মাছ কিনেই ঘরে ফিরব।
পাইকারি মাছের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, ইলিশ ব্যবসায়ী ইলিয়াস ৭ টা বাচ্চা ইলিশ (১ কেজি) ৯ শ টাকায় এবং ৪ টা বাচ্চা ইলিশ (১ কেজি) ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন।
বড় ইলিশ চোখে পড়ার মতো নয়। ঢাকা, উত্তরবঙ্গের পাবনা, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরের ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে অধিক দামে বিক্রির আশায় ট্রাক ভরে নিতে দেখা যায়।
স্থানীয় সাংবাদিক এস এম মাহমুদ হাসান আক্ষেপ করে বলেন, ইলিশ ছোঁয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।
বাগেরহাট জেলার চলতি দায়িত্বে থাকা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাজকুমার বাসসকে জানান, গতরাত ১২ টার পর থেকে ২২ দিন সাগরে মৎস্য আহরণ ও কেনা বেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
বাজারের আড়তদার অনুপ কুমার বিশ্বাস জানান, জেলেদের যে পরিমাণ দাদন দেয়া হয়েছে তার অর্ধেকটাও এই মৌসুমে ওঠেনি। ট্রলার মালিক ও জেলেদের একই অবস্থা। তাদের আগামী দিনগুলো কাটবে চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে।
মৎস্যজীবী ইব্রাহিম জানান, ২২ দিনে তাদের জন্য সরকারি চাল বরাদ্দ মাত্র ২৫ কেজি। তাতে পরিবার পরিজন নিয়ে মাস চলাটা খুবই কঠিন। এসময় তারা সরকারের কাছ থেকে বরাবরই নগদ অর্থ বা প্রণোদনার দাবি তুলে আসছে।