বাসস
  ০৭ আগস্ট ২০২৩, ২১:৫৫
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ২২:০৯

বঙ্গমাতা আওয়ামী লীগকে নিজের পরিবার মনে করতেন : অধ্যাপক আরেফিন

॥ মলয় কুমার দত্ত ॥
ঢাকা, ৭ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস): বঙ্গমাতা  শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে আমৃত্যু নিজের পরিবার মনে করতেন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতার জন্য তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাসস’কে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে যখনই কারাগারে থাকতে হয়েছে, তখনই বঙ্গমাতা তার নিজ পরিবার এবং আওয়ামী লীগ পরিবার (দল) উভয়কেই দেখাশোনা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গমাতা সহযোগিতাটা করেছিলেন কীভাবে ? এটা এমন নয় যে, বঙ্গমাতা জমিদার ছিলেন। এটা এমনটাও নয় যে, বঙ্গবন্ধু জেলে আছেন... তার প্রচুর অর্থ ও সম্পদ ছিল এবং বঙ্গমাতা তার পরিবারের ব্যয় নির্বাহের জন্য ওই সব অর্থসম্পদ ব্যয় করতেন। বঙ্গমাতা তাই অল্প পরিমাণে কিছু অর্থ সঞ্চয় করতেন এবং দুটি পরিবার- তার নিজ পরিবার  ও আওয়ামী লীগের দেখাশোনার জন্য ব্যয় করতেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন বলেন, বঙ্গমাতার হাতে যখন আর কোনো সঞ্চয় থাকতো না, তখন তিনি তার পরিবার ও তার বৃহত্তর পরিবার- আওয়ামী লীগ চালানোর জন্য আলমিরা, ফ্রিজের মতো জিনিসপত্রও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘কারাগারের বাইরে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু যেমন আওয়ামী লীগ কর্মীদের সহযোগিতা করতেন, ঠিক একইভাবে তিনি জেলে থাকাকালেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গমাতার কাছে আসতেন এবং তিনি তাদের সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করতেন।’
অধ্যাপক আরেফিন বলেন, এমন কোনো দিন নেই যেদিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর বাসভবন থেকে না খেয়ে বের হতে পারতেন। তবে কখনো কখনো এমনও হয়েছে যে, তার নিজের বাসার খাবারও ফুরিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে তাঁর মাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের  বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা তাদের বাসায় এসে খাবার খেতেন, তা উল্লেখ করেছেন। তিনি শেখ হাসিনার স্মৃতিচারণের কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, ‘মাঝে মাঝে দেখা যেত খাবারের তুলনায় মেহমান অনেক বেশি । বাড়িতে খাবারের ঘাটতি হতো। তখন অতিথিদের অন্তত ডাল (রান্না করা ডাল) দিয়ে ভাত খাওয়ানো হতো। সেই মুহূর্তে কী আর করার থাকতো ? তারপর মা ডালের পরিমাণ বাড়াতে কিছু পানি মিশিয়ে সবাইকে খাবার পরিবেশন করতেন। কিন্তু কেউ আমাদের বাড়িতে এসে কিছু  না খেয়ে চলে যাবে- এটা আমার মায়ের কাছে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না।’
অধ্যাপক আরেফিন বলেন, শেখ হাসিনা তাঁর স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেছেন যে শৈশবে মাঝে মাঝে ঘুম থেকে জেগে তিনি দেখতে পেতেন যে আলমিরা বা ফ্রিজের মতো কিছু আসবাবপত্র ঘরে নেই  এবং তারপর তিনি তাঁর মাকে এ বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে মা বলেতেন, ‘আমাদের এতো আসবাবপত্রের দরকার নেই । সাদাসিধে জীবন যাপন করাই ভালো। তাই সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছি।’ অধ্যাপক আরেফিন উল্লেখ করেন, একদিন ঘুম থেকে জেগে শেখ হাসিনা দেখতে পান-  তাদের যে ফ্রিজ ছিল সেটি নেই এবং তখন তিনি তার মাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে বঙ্গমাতা বলেন, ‘ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খেয়ে সর্দি-কাশিতে ভুগছো। তাই বিক্রি করে দিয়েছি।’  তিনি বলেন, ‘আসলে বঙ্গমাতা তার আর্থিক কষ্ট লাঘব করতে এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের সহযোগিতা করার জন্য আসবাবপত্র বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার ছেলেমেয়েরা যাতে এটি জেনে মর্মাহত না হয়, সেজন্য তিনি তার মতো করে বিভিন্ন উপায়ে সন্তানদের একটা কিছু বলার চেষ্টা করতেন।’
বিশিষ্ট যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তিত্ব প্রফেসর আরেফিন বলেন, ‘সুতরাং, আমরা যদি এভাবে দেখি যে, একজন মা এবং একজন গৃহিণী হিসেবে তিনি কীভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, তাহলে বলতেই হবেÑ এটি সত্যিই অসাধারণ। এটি বেগম মুজিবের বৈশিষ্ট্য। আমরা এ ধরনের অনেক ঘটনার কথাই জানি। এগুলো শেখ হাসিনার নিজের স্মৃতিচারণ থেকে আমরা জেনেছি, পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতাও এসব কথা উল্লেখ করেছেন।’ তিনি বলেন, বেগম মুজিব সম্পূর্ণরূপে একজন গৃহিণী ছিলেন, কিন্তু গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও তার রাজনৈতিক সচেতনা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। বঙ্গমাতা ছিলেন অনেক দৃঢ়চিত্ত, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং রাজনীতি সচেতন মানুষ।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সুবেদার আবদুর রাজ্জাকের একটি মন্তব্য উল্লেখ করে অধ্যাপক আরেফিন বলেন, সুবেদার রাজ্জাক তার স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেছেন যে, একদিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের আলোচনা চলছিল। কিন্তু তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছিলেন না। সুবেদার রাজ্জাকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ঠিক আছে আমরা এখনই বৈঠক শেষ করি, পরে আবার বসব।’ বাসভবনের ভেতর থেকে বেগম মুজিব বিষয়টি শুনে সেখানে আসেন। তিনি বলেন, ‘না, আপনারা এখানে বসুন এবং আপনারা একটি সিদ্ধান্তে না পৌঁছানো পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যান। একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পরই আপনারা মিটিং শেষ করবেন।’ এভাবে বেগম মুজিব বিভিন্ন সময়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন, যা দলের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ছিল এবং বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুও সর্বদা বঙ্গমাতার যে কোনো পরামর্শকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতেন।