বাসস
  ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১৪:২২
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ২১:৩৪

জাতিসংঘে গুমবিরোধী সনদের স্বাক্ষরিত অনুলিপি হস্তান্তর

ঢাকা, ৩১ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস): বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সকল ব্যক্তিকে গুম থেকে সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সনদ (আইসিপিপিইডি)’তে যোগদান উপলক্ষে সনদের স্বাক্ষরিত অনুলিপি হস্তান্তর করেছে। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পথে তার অঙ্গীকার পূরণে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো।
আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ এ মুহিত শুক্রবার ট্রিটি সেকশন প্রধান ডেভিড কে ন্যানোপুলোসের কাছে দলিলটির অনুলিপি হস্তান্তর করলে ডেভিড সকল বহুপক্ষীয় চুক্তির জিম্মাদার মহাসচিবের পক্ষে অনুলিপিটি গ্রহণ করেন।
হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মুহিত বলেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসে নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সকল মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘সরকার গঠনের ২০ দিনের মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার চুক্তিতে যোগদানের সমস্ত অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাতে সরকারের প্রতিশ্রুতি যথার্থভাবে প্রকাশ পায়।’
বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ৯টি সনদের ৮টিতে সই করলেও জাতিসংঘের দীর্ঘদিনের অনুরোধের পরও বিগত সরকার গুমবিরোধী সনদে সই করেনি। অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পাশাপাশি গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে চায়। এ লক্ষ্যে সরকার গুমবিরোধী সনদে যুক্ত হলো।
উল্লেখ্য, গুমবিরোধী সনদটি ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ৩২টি দেশ এটি অনুস্বাক্ষর করার পরে ২০১০ সালে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়। সামগ্রিকভাবে এই সনদের লক্ষ্য গুম বন্ধের পাশাপাশি এই অপরাধের জন্য দায়মুক্তি বন্ধ করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া।
স্থায়ী প্রতিনিধি উল্লেখ করেন, দলিলটি ৩০ আগস্টের বিশেষ দিনে জমা দেওয়া হয়েছে, যে দিনটি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়। মুহিত বলেন, ‘আমাদের আজকের এই পদক্ষেপ এ ধরনের জঘন্য অপরাধের শিকার অগণিত ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সংহতির প্রতিফলন।’
ন্যানোপুলোস এই ঐতিহাসিক উপলক্ষ্যে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান এবং বহুপক্ষীয় চুক্তি কাঠামোর প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারে প্রশংসা করেন। তিনি জানান, জাতিসংঘ অবিলম্বে সকল ব্যক্তিকে গুম থেকে সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়ে সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যোগদানের দলিল হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আইসিপিপিইডি’র ৭৬তম পক্ষ হওয়ার সকল আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করল। বিধি মোতাবেক দলিল জমা দেওয়ার তারিখের ৩০তম দিন ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে সনদটি বাংলাদেশের জন্য বলবৎ হবে।
এর বৃহস্পতিবার আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গুম থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের অভিযোগ নিয়ে গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের সমালোচনা রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিত গোপন বন্দিশালা থেকে দীর্ঘ সময় পর বেশ কয়েকজন ব্যক্তি মুক্ত হওয়ার পর গুমের বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে আসে।
বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সাত শ’র বেশি মানুষ গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৫০ জনের বেশি মানুষের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক গুমের হাত থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানান।
একই দিনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বলপূর্বক গুমের ইস্যুটি নিয়ে বাংলাদেশের একটি দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক ইতিহাস রয়েছে। এ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর ও জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বার বার কথা বলে আসছে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিটি গুমের তদন্ত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে দেশবাসীর কাছে প্রতিশ্রুটি ব্যক্ত করে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে সরকার ইতোমধ্যে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে ইতোমধ্যে একটি কমিশন গঠন করেছে।