বাসস
  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:০৫
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:১৩

শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্র নস্যাতের আহ্বান শ্রমিকদল নেতৃবৃন্দের

ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলনের নামে দেশের শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান। রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের পোশাক ও ওষুধ কারখানায় শ্রমিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এক জরুরি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম। শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি শ্রমিক সংগঠন হিসাবে আমাদের অবশ্যই শ্রমিকদের চাকরি ও শ্রম আইনে সুরক্ষিত অন্যান্য অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের এও বুঝতে হবে যে, শ্রমিক আন্দোলনের নামে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমাদের এটিকে প্রতিহত করতে হবে। তিনি বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও স্বৈরাচারের দল এখনো নিজ নিজ অবস্থানে রয়েছে। স্বৈরাচারকে সুসংহত করার জন্য এদেরকে দুর্নীতি ও অবৈধ উপায়ে সম্পদ আহরণের অপার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তারা এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিজয়কে নস্যাৎ করতে তাদের অর্থ ও প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপির এই প্রবীণ নেতা বলেন, ২০২৪ সালের পরাজিত শক্তি ভালো করেই জানে যে, রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে তারা এখনই কিছু করতে পারবে না। তাই তারা এখন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে ব্যবহার করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এ বিজয়কে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকারী শ্রমিকদের কিছু যৌক্তিক দাবি থাকতে পারে, তবে তাদের উচিত সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়া। বিভিন্ন শিল্প এলাকায় চলমান শ্রমিক আন্দোলন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ।’ তিনি শ্রমিক নেতাদের স্থানীয় জনগণ, স্থানীয় ইউনিটের নেতৃবৃন্দ, কারখানা মালিক সমিতি ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা পদত্যাগ চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা পরিবারের সদস্য ও আশপাশের লোকজনসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এটা তাদের অপকর্মের ফল।’
শুধু যে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তা নয়, নারী-শিশুসহ সর্বস্তরের শত শত মানুষ আন্দোলনে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দায় আছে ওইসব মানুষের কাছে। তাই আমরা তাদের রক্ত বৃথা যেতে দিতে পারি না।’
বিএনপি সম্পর্কে বলতে গিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, দলটি এখন দেশে সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা ভোগ করছে। তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় গণমানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণের চেষ্টা করে। বিএনপির ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করলেও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাকশালকে কবর দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, স্বৈরশাসক এরশাদ আবার গণতন্ত্রকে হত্যা করে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তা পুনরুদ্ধার করেন, এমনকি তিনি সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেও জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিলেন। তিনি বলেন, এখন তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আগের সরকারের পতনের এক দফা দাবিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে, যা অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, “আমরা ক্ষমতায় এসে জনগণকে দমন করতে চাই না, কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করতে বা ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করতে চাই না। আমরা রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য ক্ষমতায় যেতে চাই।” জনপ্রতিনিধিরা যাতে দেশে সরকার গঠনের সুযোগ পান, সেজন্য দলের লোকদের কাজ করার আহ্বান জানান।
সভায় ডাঃ জাহিদ হোসেন বলেন, দেশে কখনো ওষুধ শিল্পে কোনো আন্দোলন দেখা যায়নি, তবে বর্তমানে শ্রমিক আন্দোলনের নামে অনেক ওষুধ প্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হয়েছে। শ্রমিকদলকে কেউ যেন তাদের অপচেষ্টার বলির পাঁঠা বানাতে না পারে, সেজন্য তিনি শ্রমিকদল নেতাদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের চা, পাট ও চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করেছে এবং এখন গার্মেন্টস ও ওষুধ শিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে দেশের শিল্প-কারখানা ধ্বংস করে দেশকে পিছিয়ে নিতে না পারে, সেজন্য শ্রমিকদল নেতাদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুস্তাফিজুল করিম মজুমদারের সঞ্চালনায় সভায় সারাদেশের শ্রমিক দলের নেতৃবৃন্দ যোগ দেন।