বাসস
  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৫০
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:১৪

‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’র মাধ্যমে ‘আবার শুরু করছে বাংলাদেশ’: ইকোনমিস্ট

ঢাকা, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বহুল প্রচারিত সপ্তাহিক ইকোনমিস্ট সাময়িকীর চলতি সংখ্যায় ‘আবার শুরু করেছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রচ্ছদ নিবন্ধে বলা হয়েছে, নানা জটিল সমস্যা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে এবং বাংলাদেশ এখন ড. ইউনূসের মতো নৈতিকতার বলে বলীয়ান একজন নেতা পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ও বহুল পঠিত সাপ্তাহিকটি ‘বাংলাদেশ গুরুত্ব বহন করে; একে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না’- উল্লেখ করে বলেছে, সুসংবাদ হচ্ছে, দেশটির অর্থনীতি দ্রুত বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম এবং দেশটির নগরিক সমাজ সদা সক্রিয় ও সোচ্চার।
নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাজপথে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে দেশ-ছাড়া করার পর নোবেল শান্তি বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তাঁর মতো অনেক বাংলাদেশি স্বাধীনতা লাভের অর্ধ শতাব্দী পর এটিকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলছেন।
সাময়িকীটি লিখেছে, মুহূর্তের অঙ্গীকার পূরণে বাংলাদেশকে  জরাগ্রস্ত  স্বৈরাচারকে গদিচ্যুত করার চেয়েও বেশি কিছু করতে হবে: অবশ্যই পচন-ধরা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সারিয়ে তুলতে হবে। সমস্যার মধ্যে রয়েছে, দুষ্ট  রাজনৈতিক পরিবারতন্ত্র এবং সোজা হয়ে দাঁড়াতে ব্যর্থ হওয়া দুর্বল প্রতিষ্ঠানসমূহ।...শীর্ষ পর্যায়ে স্থবিরতা রাজনীতিকে বিষাক্ত করে তুলেছে।
ড. ইউনূসের লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, কিন্তু প্রথমে তাকে শেখ হাসিনার কুক্ষিগত প্রতিষ্ঠান, যেমন: নির্বাচন কমিশন ও আদালতকে সাফ করতে হবে।
দেশকে গণতন্ত্রের পথে আনার জন্য ড. ইউনূসের হাতে সময় খুবই কম উল্লেখ করে নিবন্ধে বলা হয়, তার সাফল্য বা ব্যর্থতা ১৭.৩ কোটি বাংলাদেশির জীবন গঠন এবং চীন, ভারত, রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রভাব ফেলবে।
এতে বলা হয়, ড. ইউনূস অত্যন্ত কঠিন কাজের সম্মুখীন। তার অগ্রাধিকার হবে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঢেউ প্রতিরোধ, যা অতীতে বাংলাদেশের রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এর মানে হচ্ছে, টেকনোক্র্যাট পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদেরও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
ইউনূসকে দ্রুত কাজ করার পরামর্শ দিয়ে নিবন্ধটিতে বলা হয়, অনির্বাচিত কেয়ারটেকার সরকারের খুব বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা উচিত হবে না; এতে এটি বৈধতা হারাতে পরে, এমনকি এর সামরিক সমর্থকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে প্রলুব্ধ হতে পারে।
সাময়িকীটি সতর্ক করে বলেছে, দেশটি পাকিস্তানের মতো উগ্র ইসলামপন্থীদের খপ্পরে পড়তে পারে। আর্থিক চাপ বাড়লে বাংলাদেশ সুলভ ঋণ ও অস্ত্রসস্ত্রের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। এতে প্রতিবেশী ভারতের সাথে সম্পর্ক অস্থিতিশীল এবং গণতন্ত্র আরো বিপন্ন হতে পারে।
নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, ‘অর্থনীতির প্রসঙ্গে কথা হচ্ছে, বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্ক কমাতে বাইরে থেকে আরও তহবিল জোগাড় করতে হবে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন বাণিজ্য চুক্তির জন্য সচেষ্ট হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ড. ইউনুসকে দেশের তরুণ সমাজ, জায়মান ও বর্ধমান হারে শহুরে জনসংখ্যার আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে অবশ্যই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নতুন ধ্যান-ধারণা ও নেতৃত্বের জন্য অবারিত করে দিতে হবে।’
সাময়িকীটি বাংলাদেশে কর্তত্ববাদী শাসনকে সমর্থন যোগানোর জন্য ভারতকে দায়ী করলেও উল্লেখ করেছে যে, দেশটি (ভারত) একটি স্থিতিশীল প্রতিবেশ চাইলে তাকে অবশ্যই তার দায়িত্ব পালন করতে হবে: (বাংলাদেশে) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনে প্রেরণা যোগাতে হবে এবং আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।