বাসস
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:১২

জাতীয় ঐক্য ও দ্রুত রাষ্ট্র সংস্কারের আহ্বান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের

ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে জনগণের আশা-আকাঙ্খার পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার জন্য আজ এক আলোচনা সভায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক আলোচনা সভার সভাপতিত্বকালে ‘আমার বাংলাদেশ’ (এবি) পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা জানি রাষ্ট্র সংস্কার একটি দীর্ঘমেয়াদী কাজ, তবে এটি দ্রুত করা উচিত।’ এবি পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস : কেমন ছিল দিনগুলো, কেমন হতে পারে’ শীর্ষক আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন।
আলোচনা সভায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী প্রমুখ বক্তৃব্য দেন ।
এবি পার্টির প্রধান বলেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর এই সরকার বন্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করছে উল্লেখ করে সোলায়মান বলেন, ‘আমরা তাদের সর্বাত্মক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি এবং তা করব ইনশাল্লাহ।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খা বিবেচনায় নিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে যত দ্রুত সম্ভব অবাধ ও সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করবে।
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ অনেক ত্যাগের বিনিময়ে একটি নতুন স্বাধীন দেশ পেয়েছে এবং তারা এখন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। তিনি বলেন,‘অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন ও মুক্ত দেশ পেয়েছি। আমরা এখন মুক্ত পরিবেশে কথা বলতে পারি। সাংবাদিক সমাজসহ কারও এখন কোনো ভয় নেই।’ এই মুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বিএনপি’র এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর জনগণের মানসিকতায় যে পরিবর্তন এসেছে, তা আমাদের বুঝতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ এখন তাদের রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুরোপুরি ফিরে পেতে চায়।’ চৌধুরী বলেন, ‘জনগণ একটি মুক্ত পরিবেশ এবং সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চায়। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের নিচে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সেই ৬৫ শতাংশ মানুষের চিন্তাভাবনার কথা বুঝতে হবে। যারা তা বুঝতে ব্যর্থ হবে, তাদের ভবিষ্যতে রাজনীতিতে খুব বেশি জায়গা থাকবে না।’ তিনি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাষ্ট্র সংস্কারের কাজকে এগিয়ে নিতে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘যে শক্তি দেশকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ধ্বংস করেছে, তাদের প্রতিহত করতে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অনেক রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শত শত প্রস্তাব রাখলেও দেশ ও জনগণের মৌলিক চাহিদা সরকারকেই নির্ধারণ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বিতর্কিত বিষয়ে কথা বলা উচিত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি এটি নির্ধারণ করতে না পারেন, তবে আপনি সঠিকভাবে এগোতে পারবেন না।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, অনেকেই অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপ্লবী হিসেবে আখ্যায়িত করতে চান, কিন্তু বাস্তবে এটি একটি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার, কারণ এই সরকার বিদ্যমান সংবিধান অনুসরণ করে চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে সক্রিয় করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ এখনো পুরোপুরি সক্রিয় নয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশকে সক্রিয় করার বিকল্প নেই।’ তিনি গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সংঘটিত প্রতিটি হত্যা, জোরপূর্বক গুম এবং অন্যায়ের বিচার করার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং একটি মানবিক দেশ চাই, যেখানে নাগরিকদের অধিকার আর কখনো খর্ব করা হবে না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ শ্রমিকদের পরিবারের দায়িত্ব নিতে এবং আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, একটি সরকারের মূল্যায়নের জন্য এক মাস যথেষ্ট  সময় নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা শহীদদের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব রয়েছে তা পালন করছি কিনা, আমাদেরকে তা  মূল্যায়ন করা উচিত। এখনও আহতদের আর্তনাদ আমাদের হতবাক করে।’ সাকি বলেন, দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী শিক্ষার্থীদের অনন্য ভূমিকা এই সরকারের বোঝা উচিত। এই সরকারকে গণহত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গণ-অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মোহাম্মদ মশিউজ্জামান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট আহমদ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট প্রধান ডা. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক  মেজর (অব.) আব্দুল ওয়াহাব মিনার ও বিএম নাজমুল হক প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।