ঢাকা, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সংস্কার কমিশনের দেয়া সংবিধান সংস্কারের ২৫টি প্রস্তাবে বিএনপির একমত রয়েছে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সালাউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, ‘সংস্কার প্রস্তাবের ২৫টির সঙ্গে একমত ও ২৫টিতে আংশিক মত দিয়েছি আমরা। বাকিগুলোতে আমাদের (বিএনপি) দ্বিমত রয়েছে।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে সংবিধান সংশোধনী নিয়ে যে মৌলিক প্রস্তাব দিয়েছে, সেগুলো নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা করব। যেটা যৌক্তিক সেটাই করবো। প্রয়োজন হলে আমরা আবারও বসবো।’
বিচার বিভাগের সংস্কারে ৮৯ দফা নিয়ে মতামত জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সবকিছু সাংবিধানিক হওয়া উচিত। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চাই। প্রক্রিয়াটা যেন সাংবিধানিক হয়।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে বেশিরভাগই সংশোধনী দিয়েছে। এনআইডি, সীমানা নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকা উচিত।’
এর আগে আজ সকাল পৌনে ১১টার দিকে সংসদ ভবনের এলডি হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বিএনপির ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ বৈঠকে অংশ নেয়।
বিএনপির ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এ সময় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ তৈরি করতে চায় কমিশন। স্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই মূল লক্ষ্য। গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির ভূমিকা প্রশংসনীয়।’
বৈঠক শুরুর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সংস্কার একটা চলমান অনিবার্য প্রক্রিয়া, হতেই হবে। আমি যখন একা আমার ঘরে থাকি তখন ঘরের যে সেটআপ যখন বিয়ে করি সেটা বদলে যাবেই। আমাদের যখন সন্তান হবে তখন সেটা আবার বদলে যাবে। আরেকটা সন্তান হলে আরো বদলে যাবে, তাদের বয়স যখন বাড়বে তখন আবার বদলে যাবে। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলায়, বদলাবেই।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা সবাই চাই, ভালো চাই। আরও ভালো চাই, আরও ভালো চাই। কিন্তু খুব ভালো করার জন্য যেন আমরা এতো সময় না নেই যাতে মানুষের পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা স্তিমিত হয়ে যায়। নিশ্চয় আমরা ভালো করতে চাই এবং এই ভালো করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে, সব সময় থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কালকেও প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, বিএনপির চাইতে বেশি সংস্কার বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দল করেছে? রাজনৈতিকভাবে বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা তো বিএনপি করেছেন। বহু দলীয় গণতন্ত্র তো বিএনপি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তো বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছেন।’
তত্ত্বাবধায়ক শাসন ব্যবস্থা তো বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপি প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ, গ্রাম সরকার প্রবর্তন করেছে। এমনকি মুক্ত বাজার অর্থনীতি, দুর্নীতি দমন কমিশন বিএনপি গঠন করেছে।
তিনি বলেন, আজকে অর্থনীতির সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত ভ্যাট সিস্টেম বিএনপি চালু করেছে। অর্থনীতির মূল স্তম্ভ পোশাক খাত বিএনপির হাতে হয়েছে, কৃষি উন্নয়ন, প্রবাসী কর্মসংস্থান, পল্লি বিদ্যুতায়ন থেকে শুরু করে সমবায় উন্নয়ন, কুটির শিল্প সবকিছুর যুগোপযোগী উন্নয়ন বিএনপির আমলেই হয়েছে।
বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে না, সংস্কারের দল-এ কথা উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘তারপরও কেউ কেউ নানা কথা বলেন, তারা যখন সংস্কারের ‘স’ উচ্চারণ করেনি তখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ দিয়েছেন। কেউ যখন সংস্কারের কথা ভাবেনি তখন শহীদ জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি এবং আমরা এটা বলেছি, এর চেয়ে ভালো প্রস্তাব থাকলে সেটা সাদরে গ্রহণ করব। কাজেই যদি ঐকমত্য কমিশনের সনদ নাও হয় বিএনপির জন্য একটা সংস্কারের সনদ আছে। কাজেই আমরা সংস্কারের পক্ষে, এ বিষয়ে কোনো দ্বিধা নেই।’
নজরুল বলেন, ‘আমরা একটা জিনিস বলব, সব কিছুর উপরে জনগণ। জনগণ কার মাধ্যমে সম্মতি জানায় আমরা জানি। আমরা বিশ্বাস করি, এমন যোগ্য মানুষরা এই কমিশনের দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের নেতৃত্বে এই কমিশন কাজ করেছে। তাদের সহযোগিতায় আমরা আগামী দিনে আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপিসহ সবগুলো রাজনৈতিক দলের সাথে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম বৈঠকটি হয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সঙ্গে। এ পর্যন্ত তারা ১১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে।
গত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে মতামত জমা দেয় বিএনপি।