ঢাকা, ১৩ জুন, ২০২৫ (বাসস) : গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের আহমেদাবাদ শহরে লন্ডনগামী একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। যার ফলে ২৪২ জনের মধ্যে মাত্র একজন অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন। জেটটি চিকিৎসক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আবাসিক ভবনে আঘাত করেছে। দুপুরের খাবারের সময় এএফপি’র একজন সাংবাদিক দুর্ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করতে দেখেছেন এবং বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের পিছনের অংশটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত ভবনের কিনারায় ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন।
আহমেদাবাদ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট-১৭১ বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘আহমেদাবাদের এই দুর্ঘটনা আমাদের হতবাক এবং দুঃখিত করেছে। এটি হৃদয়বিদারক, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’
নগরীর পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক বলেছেন, এখন পর্যন্ত ২০৪ জন যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। চিকিৎসাকর্মীরা শহরে আহতদের চিকিৎসা করছেন।
প্রাথমিকভাবে বিমানে থাকা সকলের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হলেও, রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ধনঞ্জয় দ্বিবেদী এএফপি’কে বলেছেন, ‘একজন বেঁচে আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে’ এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এএফপি’র সাংবাদিক দুর্ঘটনার পর একটি ভবনে আগুন জ্বলতে দেখেছেন। বাতাসে ঘন কালো ধোঁয়া উড়ছে এবং বিমানের একটি অংশ মাটিতে পড়ে আছে।
একজন চিকিৎসক যিনি তার পুরো নাম প্রকাশ না করে শুধু কৃষ্ণা নামে পরিচিত,তিনি বলেছেন, ‘বিমানের অর্ধেক অংশ আবাসিক ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে যেখানে ডাক্তাররা তাদের পরিবারের সাথে থাকতেন।’
কৃষ্ণা বলেছেন, ‘বিমানের নাক এবং সামনের চাকা ক্যান্টিন ভবনে পড়েছিল যেখানে শিক্ষার্থীরা দুপুরের খাবার খাচ্ছিল।’ তিনি ‘প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন পোড়া মৃতদেহ’ দেখেছেন। এ সময় তিনি এবং তার সহকর্মীরা প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছেন। ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানে ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। এরমধ্যে দু’জন পাইলট এবং ১০ জন কেবিন ক্রু ছিলেন।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য ফ্লাইটটিতে ১৬৯ জন ভারতীয় যাত্রী, ৫৩ জন ব্রিটিশ, সাতজন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান ছিলেন।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টারমার বলেছেন, দুর্ঘটনার দৃশ্যগুলো ‘বিধ্বংসী’ ছিল। অন্যদিকে দেশটির রাজা তৃতীয় চার্লস বলেছেন, তিনি ‘মারাত্মকভাবে হতবাক’।
-‘বিধ্বংসী’-
সিভিল এভিয়েশন ডিরেক্টরেট জেনারেল জানিয়েছে, বিমানটি মে ডে কল জারি করে এবং ‘উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়’। ভারতের গুজরাট রাজ্যের প্রধান শহর আহমেদাবাদে প্রায় আট মিলিয়ন মানুষ বাস করে এবং ব্যস্ত বিমানবন্দরটি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা দিয়ে ঘেরা।
বাসিন্দা পুনম পাটনি এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছাই তখন আশেপাশে বেশ কয়েকটি মৃতদেহ পড়ে ছিল এবং অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা আগুন নেভাচ্ছিলেন।’
তিনি বলেছেন, ‘অনেক মৃতদেহ পুড়ে গেছে’। এএফপি’র এক সাংবাদিক দেখতে পান চিকিৎসকরা একটি কার্ট ব্যবহার করে মৃতদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তুলছেন। আর একটি পোড়া ধাতব বিছানার ফ্রেম পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ দিয়ে ঘেরা। বিমানটি একটি হাসপাতাল এবং শহরের ঘোডা ক্যাম্পের মাঝামাঝি একটি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।
বিমানের অপারেটর জানিয়েছেন, বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সমস্ত ফ্লাইট ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত’ রাখা হয়েছে।
মার্কিন বিমান নির্মাতা বোয়িং জানিয়েছে, তারা এয়ার ইন্ডিয়ার সাথে যোগাযোগ করছে এবং এই ঘটনার জন্য ‘তাদের সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত’ রয়েছে, যা মামলার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে এটি ছিল ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের প্রথম দুর্ঘটনা।
যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত সংস্থা ঘোষণা করেছে, তারা উভয়েই তাদের ভারতীয় প্রতিপক্ষকে সহায়তা করার জন্য দল পাঠাচ্ছে। বিমান সংস্থার চেয়ারম্যান নটরাজন চন্দ্রশেখরন বলেছেন, তথ্য চাওয়া পরিবারগুলোর জন্য একটি সহায়তা দলসহ একটি জরুরি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়ার মালিক টাটা গ্রুপ ‘এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো প্রতিটি ব্যক্তির পরিবারকে ১ কোটি টাকা (১১৭,০০০ ডলার) আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে’ এবং আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভারত একাধিক মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৯৯৬ সালে নয়াদিল্লির আকাশে দু’টি বিমানের
সংঘর্ষে প্রায় ৩৫০ জন নিহত হয়।
২০১০ সালে, দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরে একটি এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস জেট বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে পুড়ে যায়। এতে ১৬৬ জন যাত্রী এবং ক্রুসহ ১৫৮ জন নিহত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনার কারণ কী হতে পারে তা নিয়ে অনুমান করা এখনো সময় হয়নি।
পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্লুইড মেকানিক্সের সিনিয়র লেকচারার জেসন নাইট বলেছেন, ‘বিমানটি অতিরিক্ত ওজনের ছিল বা অতিরিক্ত জ্বালানি বহন করছিল এমনটা খুব একটা সম্ভব নয়।’ ‘বিমানটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি একটি ইঞ্জিনে উড়তে পারে। তাই দুর্ঘটনার সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ হল দুটি ইঞ্জিনের ব্যর্থতা। দু’টি ইঞ্জিনের ব্যর্থতার সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ হল একটি পাখির ধাক্কা।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের বিমান শিল্পের প্রসার ঘটেছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইএটিএ) মহাপরিচালক উইলি ওয়ালশ গত মাসে এটিকে ‘অভূতপূর্ব’
বলে অভিহিত করেছেন। এর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ভারত এবং এর ১ শ’ ৪ কোটি জনসংখ্যাকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বিমান বাজার অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক করে তুলেছে।
আইএটিএ’র ধারণা, এটি এই দশকের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম হয়ে উঠবে।