বিদেশি কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শন

বাসস
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৫:০৭ আপডেট: : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৬:২৯
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ফাইল ছবি

কক্সবাজার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে কক্সবাজারে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক অংশীজন সংলাপের শেষ দিনে আজ মঙ্গলবার বিদেশি কূটনীতিক, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং দেশের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শন করেছেন।

প্রতিনিধিরা শিবিরে রোহিঙ্গাদের জীবনযাপন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, খাদ্য সরবরাহ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা বিশেষভাবে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) পরিচালিত খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং ইউএনএইচসিআরের স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদন কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। এ সময় তাঁরা রোহিঙ্গা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের দৈনন্দিন চ্যালেঞ্জ, দীর্ঘ অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা সম্পর্কে শোনেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে জানান, অংশগ্রহণকারীদের সরেজমিনে ঘুরে দেখানো হয়েছে যাতে তারা রোহিঙ্গাদের বাস্তব পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেলে এ শিবিরগুলোতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এজন্য আমরা দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছে অর্থায়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি সতর্ক করে আরও বলেন, এই সংকট দীর্ঘায়িত হলে তা শুধু বাংলাদেশের ওপর নয়, আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

কক্সবাজারে কর্মরত বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রোগ্রাম পলিসি অফিসার শেখ রবিউল আলম জানান, বিদ্যমান তহবিল দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা চালানো সম্ভব হবে। কিন্তু এখনো নতুন অর্থায়নের কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি, যা ইতোমধ্যেই শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘নতুন অর্থায়ন না এলে খাদ্য সহায়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ মানবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।’

এদিকে শিবির পরিদর্শনে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি পুরো কার্যক্রমকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। রাজনৈতিক নেতারা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট কোনো একক সরকারের সমস্যা নয়, বরং এটি জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি সংলাপে অংশ নেন। তাদের মতে, সব দলের সক্রিয় সম্পৃক্ততা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবস্থানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও শক্তিশালী করবে।

বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের অসাধারণ ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং এটিকে বৈশ্বিক মানবিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেন। তারা মনে করেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। আশা করা হচ্ছে, বৈশ্বিক কূটনীতির এ প্ল্যাটফর্ম থেকে সংকট সমাধানে নতুন দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।

কক্সবাজারে আয়োজিত এ সংলাপে সরকার, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংগঠন, কূটনৈতিক মহল এবং রাজনৈতিক দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ কক্সবাজারকে রূপ দিয়েছে বৈশ্বিক মানবিক কূটনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে। রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হলো তিন দিনের এ সংলাপ।

রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরতে গত রোববার থেকে শুরু হয়েছিল ‘স্টেকহোল্ডার্স’ ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়েজ টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এই সংলাপ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ডেঙ্গুতে আজ ৪৭০ জন আক্রান্ত
ফুটবলার সোনালীর বাড়ি পরিদর্শনে ডিসি, দেয়া হবে পাকা ঘর
পাঠ্যপুস্তক ক্রয় প্রক্রিয়ার সময়সীমা হ্রাসের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার
নারায়ণগঞ্জে কোকো আন্তর্জাতিক দাবা কাল শুরু
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবিরের উদ্বোধন
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সারা দেশে কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে: সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা
নেইমার-ভিনিসিয়াসকে ছাড়া ব্রাজিল দল ঘোষণা
দিনাজপুরে পুষ্টি কর্ম পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা 
অভিনেত্রী হিমুকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা : রাফির বিচার শুরু
ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান বাংলাদেশ ব্যাংকের
১০