বাসস
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:২৬
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:৫৬

দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রাখবে মাতারবাড়ি প্রকল্প

॥ একেএম কামাল উদ্দিন চৌধুরী ॥
ঢাকা, ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ সামলাতে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে সরকার কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্র   বন্দর নির্মাণ করছে।
সরকার মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর ছাড়াও কয়লাাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এবং মহাসড়কের উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
গভীর সমুদ্র বন্দরসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকাটি নতুন রূপ ধারণ করছে এবং এর ধারাবাহিকতায় মাতারবাড়ি ভবিষ্যতে দক্ষিণ-এশীয় অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমদানি-রপ্তানি কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
বাসস’র সাথে আলাপকালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহাজাহান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্র বন্দরটি ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমদানি-রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত হবে। স্বপ্নের গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে। প্রকল্পটি আগামী ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, এটি প্রতিবেশী দেশের বন্দরগুলোর মধ্যে মাদার ভেসেলের জন্য এই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্¦পূর্ণ ফিডার পোর্টের খ্যাতি অর্জন করবে।
মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে দেশের প্রথম এই গভীর সমুদ্রবন্দরটি জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ২ থেকে ৩ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ হচ্ছে মাতারবাড়ি বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়ানো এবং এর মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্রুত বন্দর সেবা সহজতর করা।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ৩.২ মিলিয়ন  টুয়েন্টি-ফুট ইকুইভালেন্ট ইউনিট (টিইইউস)। ক্রমবর্ধমান চাহিদা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিদ্যমান হ্যান্ডলিং ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাবে। ২০৩৩ সালের মধ্যে আমাদের হ্যান্ডলিং ক্ষমতা আরও ৪ মিলিয়ন টিইইউস বাড়াতে হবে। মংলা এবং পায়রা বন্দর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে না। তাই মাতারবাড়ি ও বে-টার্মিনালেই সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাতারবাড়ি বন্দর দেশের জিডিপিতে ২ থেকে ৩ শতাংশ যোগ করতে পারে।
এম শাহাজাহান বলেন, বাংলাদেশের সামুদ্রিক যোগাযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। কারণ, গভীর সমুদ্র বন্দর কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের মোট সক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তাবায়ন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর মহেশখালীতে বন্দর নির্মাণের জন্য ১ হাজার ২২৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। প্রথম ধাপে মোট ২৮৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। একটি কয়লা জেটি, একটি স্টোরেজ ইয়ার্ড এবং একটি ছাই পুকুর নির্মাণ করা হবে। জাইকা এই প্রকল্পে ৫শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করবে বলে জানা গেছে।
বন্দরে, ১৬-মিটারের বেশি ড্রাফ্টসহ মাদার ভেসেলগুলো বার্থ করতে সক্ষম হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোতে মাত্র ৯.৫ মিটার ড্রাফ্ট বিশিষ্ট জাহাজগুলো বার্থ করতে পারে। মাত্র ২৪০০ টিইইউস কন্টেইনারসহ কন্টেইনার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোতে বার্থ করতে পারবে। গভীর সমুদ্র বন্দরে ৮ হাজার টিইইউস এর বেশি কন্টেইনার বহনকারী জাহাজগুলো বার্থ করতে সক্ষম হবে। ইতোমধ্যেই বন্দরের জন্য ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ২৫০ মিটার চওড়া এবং ১৮.৫ মিটার গভীর চ্যানেল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। চ্যানেলটি আরও ১শ’ মিটার প্রশস্ত করার কাজ চলছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সমুদ্র বন্দরটি ভৌগলিক সুবিধা এবং গভীর সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতার ফলে দক্ষিণ-এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, এই বন্দরটি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো ব্যবহার করতে পারবে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি সংস্থা সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও একশ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো ৩৬টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আগামী দিনে মাতারবাড়ি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ আনতে সক্ষম হবে এবং দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে। মাতারবাড়িতে ব্যাপক নির্মাণ প্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক দৃশ্যপটকে পাল্টে দিবে।