নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন ভোলার মাসুমা

বাসস
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৮:৪২
ছবি : বাসস

ভোলা, ২৭ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে মারা গেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ ভোলার মাসুমা বেগম (৩৬)। সে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার মানিকা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কাসেম মিয়া ও রহিমা বেগমের মেয়ে। এবং একই ওয়ার্ডের কোড়ালিয়া গ্রামের রুদ্রি বাড়ির মো. সেলিম মিয়ার স্ত্রী। 

নিহত মাসুমার বাবা আবুল কাসেম এক বছর আগে মারা যান। মা বিবি রহিমা মেয়েকে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ। মেয়ের মরদেহ জড়িয়ে আর্ত বিলাপ দিয়ে মূর্ছা যান মা রহিমা। শনিবার রাতে মেয়ের নিথর দেহ জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে মা রহিমা বেগমও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। 

আজ সকাল সাড়ে ৯ টায় গ্রামের বাড়িতে নিহত মাসুমার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। এর আগে গতকাল শনিবার (২৬ জুলাই) বেলা ১১ টায় ঢাকা'র বার্ন ইন্সটিটিউট হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাসুমা বেগম। এরপর তার মরদেহ নিয়ে দুপুরের দিকে গ্রামের বাড়ি বোরহানউদ্দিনের উদ্দেশ্যে রওনা করেন তার পরিবারের সদস্যরা। শনিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। মাসুমাকে হারিয়ে স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।     

মাসুমা বেগমের স্বামী মো. সেলিম জানান, সে ঢাকায় একটি কোম্পানির গাড়ি চালকের চাকরি করেন। ২০০২ ইং সালে একই এলাকার মাসুমা বেগমের সাথে পরিবারিকভাবে বিয়ে হয় সেলিমের। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। প্রায় ৪ বছর আগে মেয়ের বিয়ে দেন। তার ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তরার একটি স্কুলে পড়াশুনা করেন। ভাগ্য বদলে আশায় প্রায় ৫ বছর আগে মাসুমা মাইলস্টোন স্কুলে চাকরি নেন। মাসুমার বেতনের টাকায় তার ছেলের পড়াশোনা চলে। 

তারা আরো জানান, ঘটনার দিন স্কুল ছুটি হওয়ার কয়েক মিনিট পরই বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ওই সময় মাসুমা ইচ্ছে করলে নিজে বাঁচতে পারতো কিন্তু স্কুলে শিশুদের বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন। শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায় মাসুমার। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কয়েকদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৬ জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে মারা যান তিনি। 

মাসুমার ছেলে মো. আব্দুল্লাহ জানান, ঘটনার দিন সে স্কুলে ছিল। স্কুলে থাকা অবস্থায় সে দুঘর্টনার খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে যান। তার মাকে খুঁজতে থাকেন। পরে বাবার সাথে হাসপাতালে গিয়ে ওইদিনই তার মায়ের সাথে দেখা করেন। মা'কে হারিয়ে ছেলে আব্দুল্লাহ এবং মেয়ে সুমাইয়া এখন ঠুকরে ঠুকরে কাঁদছেন। তারা বলছেন, আমাগো কপালেতো এমন দু:খ আসার কথা ছিল না..?

বোরহানউদ্দিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান উজ্জামান জানান, তিনি সকালে মাসুমার বাড়িতে এসে পরিবারকে শান্তনা দেন এবং তার পরিবারের সাথে কথা বলেন। সরকারি নির্দেশনা আসলে মাসুমার পরিবারকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
২৩ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌদির নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ
তৃতীয় দফা শুল্ক আলোচনার জন্য আগামীকাল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল 
সুনামগঞ্জে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে খুকৃবি উপাচার্যসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ: গ্রেফতার শিশুদের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন চাইলেন হাইকোর্ট
ডিআর কঙ্গো ও এম২৩ চুক্তি : শান্তির দিকে এক ভঙ্গুর পদক্ষেপ
সুদানে প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার গঠনে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট কাউন্সিল ঘোষণা করেছে আরএসএফ
কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সকল কমিটি স্থগিত
১০