চট্টগ্রাম, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা আজ সোমবার শেষ হচ্ছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
১৫ অক্টোবর চাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, আজ রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। ১৮ দিনের প্রচারণার শেষ দিনে ভোটারদের কাছে টানতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রার্থীরা। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে নির্বাচনের আমেজ বিরাজ করছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করেছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
চাকসু নির্বাচনে প্রার্থীরা অভিনব ও সৃজনশীল উপায়ে নানা প্রচারণার মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টার করেছেন। পরিবেশ সম্পাদক পদের একজন প্রার্থী গাছের আকৃতির হ্যান্ডআউট এবং লিফলেট বিতরণ করেছেন। আর আইসিটি বিষয়ক সম্পাদক পদের প্রার্থীরা তাদের পোস্টারে ওয়াইফাই প্রতীক ব্যবহার করেছেন।
এছাড়া পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রার্থীরা বাসের আকৃতির কার্ড বিতরণ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হৃদপিণ্ডের আকৃতির পোস্টার প্রচার, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক বিড়াল আকৃতির লিফলেট বিতরণ করেছেন। এমনকি কিছু প্রার্থী তাদের লিফলেট বুকমার্ক বা ক্রেডিট কার্ডের আকারে ডিজাইন করেছেন।
নির্বাচন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ পদের প্রার্থীদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী বিতর্ক আয়োজন করে চাকসু প্রচারণাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বামপন্থী দল, ইসলামী ছাত্র শিবির-সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’ এবং একটি স্বতন্ত্র প্যানেলসহ মোট ১২টি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
প্রতিটি প্যানেল শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের ইশতেহার উপস্থাপনের জন্য মিছিল, সঙ্গীত অনুষ্ঠান ও উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করেছে।
চাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ থেকে ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, ‘আমরা অবিশ্বাস্য সাড়া পাচ্ছি। আমাদের নিজেদের পরিচয় দেওয়ার দরকার নেই। কারণ শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই আমাদের চেনে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ৫ আগস্টের আগে এবং পরে উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করে আসছি। শিক্ষার্থীরা আস্থাকে মূল্য দেয়, যা কথা ও কাজের সমন্বয়ে তৈরি হয়।
আমরা বিশ্বাস করি, আমরা শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করেছি।’
চাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছে, যার ফলে নির্বাচন অত্যন্ত অংশগ্রহণমূলক হয়ে উঠেছে।
প্রার্থীরা হলগুলোতে ভোটারদের সাথে দেখা করছেন এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছেও পৌঁছানোর জন্য বাসে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ছাত্রদলের প্যানেল থেকে চাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মো. শাফায়েত হোসেন বলেন, তারা শিক্ষার্থীদের থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন এবং নির্বাচনের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
তিনি বলেন, ‘প্রচারণা শুরুর পর থেকে,আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে খুবই ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। আমরা সকল শিক্ষার্থীর জন্য কাজ করতে এবং লিঙ্গ, সম্প্রদায় বা ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য একটি উন্নত এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন আজ বিশ্ববিদ্যালয় চাকসু ভবন এলাকায় শপথ গ্রহণ করেছেন এবং তাদের ইশতেহারে বর্ণিত প্রতিশ্রুতি পূরণের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
সাজ্জাদ হোসেন বাসস’কে জানান, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ক্যাম্পাস প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক সাড়াদানে তিনি এবং তার প্যানেল উৎসাহিত। ভোটাররা উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছেন, প্রশ্ন করছেন এবং তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করছেন।
বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আরিফ উল্লাহ বলেন, ‘এবারের চাকসু নির্বাচন একটি প্রাণবন্ত উৎসবে পরিণত হচ্ছে। আমি লক্ষ্য করেছি, প্রার্থীরা সৃজনশীল উপায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশছেন।
তিনি বলেন, হল পাড়া থেকে শাহ আমানত হল এলাকায় হাঁটতে হাঁটতে আমার হাত পোস্টার এবং কার্ডে ভরে যায়। প্রতিটি কার্ড অনন্য, সৃজনশীল এবং অন্যদের থেকে আলাদা।’
কিছু প্যানেল ছাত্রী হলগুলোতে প্রজেকশন সভার আয়োজন করেছে। সেখানে ছাত্রীরা তাদের উদ্বেগ ও সমস্যাগুলো সমাধানের পরিকল্পনা নিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
চাকসু’র চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বাসস’কে জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। কিছু বুথ ইতোমধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে এবং বাকিগুলো ১৪ অক্টোবরের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে। আগামীকাল রাতের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট বাক্স পৌঁছে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা প্রক্রিয়াটি তদারকি করছেন। নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে বহিরাহত প্রবেশ করতে পারবে না।
অধ্যাপক মনির উদ্দিন যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের ওপর আস্থা রাখছেন।