বাসস
  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:১১

সেভিয়াকে হারিয়ে আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল বার্সেলোনা, মায়োর্কার কাছে মাদ্রিদের হার

বার্সেলোনা, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ (বাসস/এএফপি) : সেভিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে লা লিগায় আট পয়েন্টের সুস্পষ্ট ব্যবধান নিশ্চিত করেছে টেবিলের শীর্ষে থাকা বার্সেলোনা। 
২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মত লা লিগার শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে কাতালান জায়ান্টরা। দিনের শুরুতে রিয়াল মায়োর্কা ১-০ গোলে  রিয়াল মাদ্রিদকে পরাজিত করায় বার্সেলোনা পয়েন্টের ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। 
কোচ জাভি হার্নান্দেজ বলেছেন বার্সাকে এখনই কোন ধরনের উচ্ছাস প্রকাশ করার অনুমতি দেয়া হবে না। যেকোন সময়ই মাদ্রিদ লড়াইয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে পারে বলেও তিনি খেলোয়াড়দের সতর্ক করেছেন। এ সম্পর্কে জাভি বলেন, ‘এখনো মাদ্রিদ লা লিগার শিরোপার অন্যতম দাবীদার। কারন  তারাই লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। আমি জানি রিয়াল মাদ্রিদ মৌসুমের শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাবে। লড়াই করে ফিরে আসার তাদের অতীত ইতিহাস আছে। কিন্তু আমাদের সেটা করতে দেয়া যাবেনা।’ 
ক্যাম্প ন্যুতে প্রথমার্ধটা দু’দলই সমান তালে লড়াই করে গেছে। জোর্দি আলবা ৫৮ মিনিটে ডেডলক ভাঙেন। বার্সেলোনার হয়ে অপর দুটি গোল করেছেন গাভি ও রাফিনহা। লিগে শেষ ১১টি ম্যাচে এটি বার্সার ১০ম জয়। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত বার্সেলোনা টানা ১৫ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। এবারের মৌসুমে লা লিগায় এখন পর্যন্ত মাত্র সাত গোল হজম করেছে জাভির দল। ১৫ ম্যাচে তারা কোন গোলই হজম করেনি। 
ম্যাচ শুরুর চার মিনিটের মধ্যে গোঁড়ালির ইনজুরিতে পড়ে মাঠত্যাগ করেন অধিনায়ক সার্জিও বাসকুয়েটস। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন ফ্রাংক কেসি। এ কারনে বার্সেলোনার গেমপ্ল্যানে শুরুতেই কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছিল। 
জর্জ সাম্পওলির সেভিয়া মৌসুমের শুরুটা ভাল করতে পারেনি। বর্তমানে তারা টেবিলের ১৬তম স্থানে রয়েছে। কাল পাঁচজন ডিফেন্ডার নিয়ে খেলতে নেমেও বার্সেলোনাকে আটকাতে পারেনি। কেসির দারুন এক এ্যাসিস্ট থেকে আলবা দারুন ফিনিশিংয়ে বার্সেলোনাকে এগিয়ে দেন। লো পাসে রাফিনহা এরপর গাভিকে দিয়ে ৭০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করিয়েছেন। ইনজুরিতে থাকা ওসমানে ডেম্বেলের স্থানে খেলতে নামা ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রাফিনহা কাল ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ৭৯ মিনিটে আলবার ক্রস থেকে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে রাফিনহা বার্সেলোনার হয়ে তৃতীয় গোলটি করেছেন। সেভিয়ার সাবেক বার্সেলোনা মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচ স্বাগতিক সমর্থকদের নজড়ে ছিলেন। যদিও দলের পরাজয় আটকাতে কোন ভূমিকা রাখতে  পারেননি। অভিজ্ঞ এই ক্রোয়েশিয়ান ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমি মনে করি ক্যাম্প ন্যু থেকে কিছু নিয়ে যেতে গেলে অবশ্যই সেই খেলোয়াড় কিংবা দলকে সাহসী হতে হবে।’
জেভিয়ার আগুইরের সমন্বিত আক্রমনে মায়োর্কার কাছে পরাজিত হয়ে রিয়াল মাদ্রিদের লা লিগা শিরোপা জয়ের আশা অনেকটাই পিছিয়ে গেছে। মার্কো আসেনসিও পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করলে মাদ্রিদের পরাজয় নিশ্চিত হয়। ১৩ মিনিটে নাচোর আত্মঘাতি গোলে ম্যাচটি হঠাৎ করেই কঠিন হয়ে উঠে মাদ্রিদের কাছে। উত্তেজনাপূর্ন ম্যাচটিতে দুই দল মিলিয়ে ৯টি হলুদ কার্ড দেখেছে। মাদ্রিদ উইঙ্গার ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও মায়োর্কার খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মধ্যে লড়াই লেগেই ছিল। শুধুমাত্র ভিনিসিয়াসকে আটকাতে ১০বার ফাউল করেছে মায়োর্কা, সব মিলিয়ে এই সংখ্যা ২৯টি। 
মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেছেন, ‘আমি মনে করি যা কিছু হয়েছে তাতে ভিনির কোন দোষ নেই। ভিনি শুধুমাত্র তার স্বাভাবিক খেলা খেলতে চেয়েছিল। এছাড়া পুরো ম্যাচের পরিস্থিতিই ছিল উস্কানিমূলক। তারা ভিনিকে বারবার ফাউল করেছে। এটা সবাই দেখেছে।’
মূল দলের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে ছাড়াই কাল মাঠে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচ শুরুর আগে অনুশীলনে আঘাত পেয়ে খেলতে পারেননি বেলজিয়ান গোলরক্ষক। ইনজুরির কারনে আরো ছিলেন না করিম বেনজেমা, এডার মিলিটাও  এবং  ফারলান্ড মেন্ডি। 
ম্যাচের শুরু থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। নাচোর আত্মঘাতি গোলের পর পাবলো মাফেওকে ফাউলের অপরাধে ভিনিকে হলুদ কার্ড দেখতে হয়েছে। এরপর থেকে ভিনির উপর চড়াও হয় মায়োর্কার খেলোয়াড়রা। একের পর এক ফাউলে তাকে খেলতেই দেয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মায়োর্ক অধিনায়ক এন্টোনি রাউলোর সাথেও বিরোধ হয় ভিনিসিয়াসের। ৬০ মিনিটে সমতা ফেরানোর সুবর্ন সুযোগ নষ্ট করে মাদ্রিদ। মায়োর্কা গোলরক্ষক প্রেড্রাগ রাজকোভিচ ডি বক্সের মধ্যে ভিনিসিয়াসকে ফাউল করলে পেনাল্টি উপহার পায় মাদ্রিদ। কিন্তু আসেনসিওকে রুখে দিয়ে সার্বিয়ান গোলরক্ষক রাজকোভিচ মাদ্রিদকে ম্যাচে ফিরতে দেয়নি। 
ক্লাব বিশ্বকাপে অংশ নিতে এ সপ্তাহেই মরক্কো সফরে যাচ্ছে গ্যালাকটিকোরা। যে কারনে দ্রুত এই পরাজয় থেকে বেরিয়ে এসে মাদ্রিদকে ক্লাব বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে হবে।
দিনের আরেক ম্যাচে ঘরের মাঠে রিয়াল ভায়াদোলিদের কাছে ১-০ গোলে হেরে গেছে তৃতীয় স্থানে থাকা রিয়াল সোসিয়েদাদ। জিরোনার কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়ে ১৭তম স্থানে নেমে গেছে ভ্যালেন্সিয়া।