শিরোনাম
নাগপুর, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ (বাসস/ওয়েবসাইট) : নাগপুরে কাল থেকে শুরু হচ্ছে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হওয়ায় এবারের সিরিজটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করতে এই সিরিজটি দু’দলের কাছেই গুরুত্বপুর্ন। এছাড়া ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের রেকর্ড অব্যাহত রাখতে চায় ভারত। অন্য দিকে ২০০৪ সালের পর ভারতের মাটিতে কখনও টেস্ট সিরিজ জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব ঘোচাতে মরিয়া অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শুরু হবে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার প্রথম টেস্ট।
সবসময়ই উত্তেজনায় ঠাসা থাকে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজ। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। মাঠে বল গড়ানোর আগেই অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের ভাষ্য তেমনই প্রমান করে। স্মিথের মতে ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয় অ্যাশেজের চেয়েও অনেক বড়।
২০০৪ সালের পর ভারতের মাটিতে ৪টি টেস্ট সিরিজ খেলে সবগুলোই হেরেছে অসিরা। ভারতের মাটিতে একটি টেস্ট বা সিরিজ জয় বড় চ্যালেঞ্জের সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন স্মিথ, ‘একটি টেস্ট ম্যাচ জেতার জন্য ভারত কঠিন জায়গা, সিরিজ জয় তো আরও বেশি। যদি আমরা এটি করতে পারি, তা হবে বিশাল অর্জন। আমি মনে করি, ভারতের মাটিতে সিরিজ জয় অ্যাশেজ সিরিজ জয়ের চেয়েও অনেক বড়।’
চাপে থেকেই টেস্ট সিরিজ শুরু করতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। ইনজুরির কারনে দলের দুই সেরা পেসার মিচেল স্ট্রার্ক ও জশ হ্যাজেলউড প্রথম টেস্টে খেলতে পারছেন না।
ভারতের স্পিন বান্ধব উইকেটেও পেস বোলিং বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়াার পেস আক্রমনকে নেতৃত্ব দেয়া ও দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ভারতে আসার পর স্পিন উইকেট নিয়ে অনেক বেশি কথা হচ্ছে। বিশেষভাবে দ্রুত গতির টেস্টে ম্যাচে। কিন্তু এটি সবসময় হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাকে মাঝে মাঝে আক্রমনাত্মক খেলতে হবে। একজন পেসারকে অনেক বেশি বোলিং করতে হবে, যা কোন পুরস্কারের জন্য নয় বরং দলের জন্য কাজটি করতে হবে।’
স্টার্ক প্রথম টেস্টের জন্য বাদ পড়লেও, পুরো সিরিজে অনিশ্চিত হ্যাজেলউড ও অলরাউন্ডার ক্যামেরুন গ্রিন। বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলার জন্য সুযোগ পেতে পারেন পেসার স্কট বোল্যান্ড। একাদশে থাকলে কামিন্সের সাথে বোলিং ওপেন করবেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার স্পিন বিভাগকে নেতৃত্ব দিবেন নাথান লিঁও। ভারতের মাটিতে ৭ টেস্টে ৩৪ উইকেট আছে তার। তবে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে কামিন্সের ব্যাটারদের।
সর্বশেষ ভারত সফরে দারুন ছন্দে ছিলেন স্মিথ। ব্যাট হাতে তিনটি সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন তিনি। এরমধেথ্য রাঁচিতে ১৭৮ রানের ঝলমলে ইনিংসও খেলেন স্মিথ। তবে রানের জন্য ঘাম ঝড়াতে হয়েছে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে। মাত্র একটি ইনিংসে অর্ধশতকের দেখা পান তিনি। সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে হারে অস্ট্রেলিয়া।
এবারের সিরিজে উসমান খাজার সাথে ইনিংস শুরু করবেন ওয়ার্নার। দারুন ফর্মে থাকায় স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি।
নিজেদের সেরা ফর্মের প্রমান দিতে এবং ভারতের বোলারদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে টপ-অর্ডারে খাজা, স্মিথ, ওয়ার্নার এবং মার্নাস লাবুশেনের দিকে তাকিয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়া।
ইনজুরি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চিন্তায় থাকলেও, ভারতের জন্য সুখবর বয়ে আনেন স্পিন অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা। ইনজুরি থেকে সুস্থ হয়ে এই সিরিজ দিয়ে দীর্ঘদিন পর আবারও মাঠে ফিরছেন জাদেজা। আরেক স্পিনার রবীচন্দ্রন অশি^নের সাথে অস্ট্রেলিয়াকে বিপদে ফেলার ফাঁদ কষেছেন জাদেজা। দলের এই দুই সেরা স্পিনারের উপর ভরসা রেখে অতীতের মত স্পিন-বান্ধব উইকেট বানিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ঘায়েলের সব পরিকল্পনা সম্পন্ন করে রেখেছে ভারত। তৃতীয় স্পিনার হিসেবে সুযোগ হতে পারে অক্ষর প্যাটেলের।
২০১৯ সালের নভেম্বরের পর সেঞ্চুরি খড়ায় ভুগছিলেন ভারতের সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ১০২০ দিন পর ২০২২ সেপ্টেম্বরে শতক হাঁকিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেঞ্চুরি খড়া কাটান কোহলি। সেঞ্চুরি খড়া কাটিয়ে ব্যাট হাতে নিজের চেনা ছন্দে ফিরেছেন তিনি। ওয়ানডেতে সর্বশেষ চার ইনিংসে তিনটি সেঞ্চুরি করেন কোহলি। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডের পর টেস্টেও সেঞ্চুরি পেতে উদগ্রীব কোহলি।
ঘরের মাঠে সদ্য শেষ হওয়া শ্রীলংকা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে চারটি সেঞ্চুরি করেন শুভমান গিল। ওয়ানডেতে ২টি সেঞ্চুরি ও ১টি ডাবল-সেঞ্চুরি করেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতেও একটি শতক হাকিয়েছেন । সংক্ষিপ্ত ভার্সনের পারফরমেন্স দিয়ে প্রথমবারের মত টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছেন সূর্যকুমার যাদব। ইনজুরির কারনে দলে নেই শ্রেয়াস আইয়ার।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজটি চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তিনি বলেন, ‘বিশ^ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া শক্ত প্রতিপক্ষ। সিরিজটি চ্যালেঞ্জিং হবে। সেরা পারফরমেন্স প্রদর্শন করতে হবে খেলোয়াড়দের।’
আগামী জুনে ওভালে আইসিসি বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিফের ফাইনাল নিশ্চিত করতে ভারতের বিপক্ষে চার টেস্টের মধ্যে ১টিতে ড্র করতে হবে বিশ্বের এক নম্বর অস্ট্র্রেলিয়াকে। ফাইনালের টিকিট পাবার সুযোগ আছে ভারতেরও। এজন্য অন্তত তিনটি ম্যাচ জিততে হবে টিম ইন্ডিয়াকে।