বাসস
  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:২৬

১০ জনের বায়ার্নের বিপক্ষেও পরাজিত হয়েছে পিএসজি

প্যারিস, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ (বাসস/এএফপি) : কিংসলে কোম্যানের একমাত্র গোলে মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলর প্রথম লেগের ম্যাচে পিএসজিকে পরাজিত করেছে বায়ার্ন মিউনিখ। বদলী হিসেবে খেলতে নামা কিলিয়ান এমবাপ্পে অল্পের জন্য অফসাইডের কারনে ম্যাচে সমতা ফেরাতে পারেননি। 
পার্ক ডি প্রিন্সেসে আলফোনসো ডেভিসের ক্রসে ৫৩ মিনিটে অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়ানো কোম্যান বায়ার্নকে এগিয়ে দেন। ঠিক ঐ মুহূর্তেই ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরার জন্য সাইডলাইনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এমবাপ্পে। দলের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে মাঠে নামিয়েও অবশ্য শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি স্বাগতিক পিএসজি। ম্যাচ শেষের আট মিনিট আগে নুনো মেনডেসের কাটব্যাক থেকে এমবাপ্পে বল জালে জড়ালে পুরো স্টেডিয়াম উল্লাস করে ওঠে। কিন্তু পর্তুগীজ ফুল-ব্যাক পাস দেবার আগে সর্বশেষ ডিফেন্ডারের সামান্য আগে থাকায় অফসাইডের কারনে গোলটি বাতিল হয়ে যায়। ম্যাচের একেবারে শেষ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের  কারনে বেঞ্জামিন পাভার্ড মাঠ ছাড়লে বায়ার্ন ১০ জনের দলে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তারপরও পিএসজিকে হার নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে। ম্যাচের একবারে শেষ ভাগে এমবাপ্পের কল্যাণে ফরাসি জায়ান্টরা কিছুটা আগ্রাসী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু একইসাথে প্রতিপক্ষের বেশ কিছু আক্রমনে বড় ব্যবধানের পরাজয় কমাতে গোলরক্ষক গিয়ানলুইগি ডোনারুমাকে শেষ পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়েছে। 
আগামী ৮ মার্চ মিউনিখে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে পিএসজি ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। ম্যাচ শেষে এমবাপ্পে বলেছেন, ‘আমরা এখন পিছিয়ে গেলাম। কিন্তু একইসাথে পুরো ম্যাচে তাদের বেশ কয়েকবার আমরা সমস্যায় ফেলেছি যা পরের ম্যাচে কাজে লাগবে। এখন আমাদের একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে দ্বিতীয় লেগের আগে সবাই যাতে সুস্থ থাকে। আমরা মিউনিখে যাবো পরবর্তী রাউন্ডে খেলার উদ্দেশ্য নিয়ে।’
প্যারিসে ক্যারিয়ার শুরু করা ফরাসি এ্যাটাকার কোম্যান গোলের পর কোন ধরনের উদযাপন করেননি। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা তার জন্য প্রথম নয়। ২০২০ লিসবনের ফাইনালে পিএসজিকে ১-০ গোলে পরাজিত করে বায়ার্ন যখন ষষ্ঠবারের মত ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তখনো ম্যাচের জয়সূচক গোলদাতা ছিলেন কোম্যান। এ সম্পর্কে কোম্যান বলেন, ‘বিষয়টা বেশ অস্বস্তিকর। এই ক্লাব, এই শহরে আমি বেড়ে উঠেছি। এখানেই আমার জন্ম হয়েছে। সে কারনে গোল উদযাপন করাটা কিছুটা হলেও কঠিন। কিন্তু দিনের শেষে এই জয়ে আমি খুবই খুশী।’
উরুর ইনজুরির কারনে কাল মূল একাদশে সুযোগ পাননি ফরাসি তারকা এমবাপ্পে। প্রাথমিক ভাবে যেমনটি ধারনা করা হয়েছিল সেই সময়ের মধ্যে এমবাপ্পে অনুশীলনে ফিরতে পারেননি। যে কারনে ফিটনেস সমস্যায় তার দলে ফেরাটা বিলম্বিত হয়েছে। বদলী বেঞ্চে থাকায় তার স্থানে ১৬ বছর ৩৪৩ দিন বয়সী ফরাসি মিডফিল্ডার ওয়ারেন জায়রে-এমেরিকে মূল দলে সুযোগ দিয়েছিলেন পিএসজি বস ক্রিস্টোফে গাল্টিয়ার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে মূল দলে জায়গা করে নিয়ে জায়রে-এমেরি রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু প্রথমার্ধে লিওনেল মেসি ও নেইমার দারুণভাবে এমবাপ্পের অনুপস্থিতি অনুভব করেছে। গ্রুপ পর্বে ছয় ম্যাচে সাত গোল করা এমবাপ্পেকে বেঞ্চে বসে সতীর্থদের উৎসাহ যোগানো ছাড়া আর কিছুই করার ছিলনা। তিনজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার নিয়ে বায়ার্ন ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের করে নেয়। প্রথমার্ধে তারা পিএসজিকে তেমন কোন সুযোগই তৈরী করতে দেয়নি। ইনজুরির কারনে এখনো বুন্দেসলিগার শীর্ষে থাকা দলটিতে খেলতে পারছেন না সাদিও মানে। জসুয়া কিমিচের শট সহজেই রুখে দেন ডোনারুমা। এই একটি প্রচেষ্টা ছাড়া প্রথমার্ধে বায়ার্নও টার্গেটে খুব বেশী শট নিতে পারেনি। 
বায়ার্ন কোচ জুলিয়ান নাগলসম্যান বিরতির পর হুয়াও ক্যান্সেলোকে উঠিয়ে নেন। তার পরিবর্তে মাঠে নামান কানাডিয়ান ডেভিসকে। এই পরিবর্তনেই বায়ার্ন গোলের দেখা পায়। বামদিক থেকে ডেভিসের ক্রসে ফাঁকায় দাঁড়ানো কোম্যান সুযোগের সদ্ব্যববহার করেন। পিএসজিও এসময় খেলোয়াড় পরিবর্তন করে আচরাফ হাকিমির জায়গায় ফরাসি সেন্টার-ব্যাক প্রিসনেল কিম্পেম্বেকে মাঠে নামায়। কিন্তু বিরতির সময় এমবাপ্পেকে অনুশীলন করতে দেখে পুরো স্টেডিয়াম নড়েচড়ে বসে। এক গোলে পিছিয়ে থাকা পিএসজি ম্যাচে ফিরে আসার প্রয়াসে আর দেরী করেনি। কার্লোস সোলারের পরিবর্তে এমবাপ্পেকে বদলী বেঞ্চ থেকে মাঠে নামান গাল্টিয়ার। এরিক ম্যাক্সিম ছুপো-মোটিংয়ের একটি শট কোনমতে রক্ষা করে পিএসজিকে লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখেন ডোনারুমা। কর্ণার থেকে পাভার্ডের হেডও আটকে দেন তরুণ এই ইতালিয়ান গোলরক্ষক। ৭৩ মিনিটে ফাবিয়ান রুইজের দেয়া বল থেকে  এমবাপ্পে একটি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন। এরপরপরই এমবাপ্পের একটি শট বায়ার্ন গোলরক্ষক ইয়ান সোমার কোনমতে রক্ষা করেন। ফিরতি শটে নেইমারকেও হতাশ করেন সোমার। এরপর এমবাপ্পে বল জালে জড়ান। কিন্তু অফসাইডের কারনে তা বাতিল হয়ে যায়। মেসিকে ফাউলের অপরাধে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে স্টপেজ টাইমে মাঠত্যাগ করেন পাভার্ড। নাগলসম্যান বলেছেন, ‘এটা স্পষ্ট যে এমবাপ্পে যেকোন সময় যেকোন ম্যাচের গতি পরিবর্তন করে দিতে পারে। এ ম্যাচের ফল আমাদের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটা শুধুমাত্র প্রথম ধাপ।’