বাসস
  ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৪
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৬

রুবেল বাড়ি ফিরলেন গুলিতে ক্ষত বিক্ষত লাশ হয়ে

॥ এসকে রাসেল ॥

কিশোরগঞ্জ, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪(বাসস) : কিশোরগঞ্জের রুবেল। অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময়ই ছিলেন সোচ্চার । নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। ছিলেন অদম্য ও সাহসী।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে ঢাকার মিরপুর-১৪ নম্বারের জিরো পয়েন্টে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন তারিকুল ইসলাম রুবেল। তার হত্যাকা-ের পর পরিবার মামলা করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা এখনও তা করতে পারেনি।

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের হাচলা গ্রামের ফরিদ উদ্দিন ও হেলেনা আক্তারের ছেলে মো. তারিকুল ইসলাম রুবেল(২৩)। চারভাই ও দ’ুবোনের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন তিনি। ভাইদের মধ্যে তৃতীয়। দরিদ্র পরিবারের হাল ধরতে একটি ডেভলপার কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় থাকতেন তিনি। স্বভাবসুলভ কারণে এবার বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ জনতার কাতারে শামিল হয়ে অংশ নিয়েছিলেন রুবেল।

গত ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে ঢাকার মিরপুর এলাকা ছিল উত্তাল। আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘাত সহিংসতার বলি হয় অনেকেই।  রুবেলও সেদিন মিরপুর ১৪ নম্বরের মেট্রোরেল ও বিআরটিসি এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেন। এ সময়ে পুলিশের ছোঁড়া চারটি গুলি লাগে তার শরীরে। গুলিতে তার মগজ পর্যন্ত ছিটকে পড়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন প্রতিবাদী তরুণ রুবেল।
শহিদ রুবেলের বড় ভাই জুয়েল আহমেদ বাসসকে জানান, ওই সময় কারফিউয়ের কারণে তাকে হাসপাতালেও নেওয়া যায়নি। এভাবেই গ্রামের বাড়িতে এনে তাকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ ডিসি অফিসে গিয়ে লাশের ময়নাতদন্তের আবেদন করলেও কাজ হয়নি। থানায় মামলাও করতে পারেন নি তারা।

তিনি আরও জানান, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।

এদিকে শহিদ রুবেলের তাড়াইলের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগেও শেষ বারের মতো মাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘আগামী সপ্তাহে তোমাদের দেখতে বাড়িতে আসবো মা।’ কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি রুবেলের। সপ্তাহ গড়ানোর আগেই ওইদিন শেষ রাতেই তিনি বাড়ি ফিরলেন গুলিতে ক্ষতবিক্ষত লাশ হয়ে। বিলাপ করতে করতে এমন নিষ্ঠুর ও হৃদয়বিদারক ঘটনার বর্ণনা দেন মা হেলেনা আক্তার(৪৫)। এ সময় বারবার বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন শহিদ রুবেলের মা।

প্রতিবেশী ওষুধ ব্যবসায়ী ফার্মেসি মালিক সাজেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শৈশব-কৈশোর বয়স থেকেই রুবেল গ্রামবাসীর কাছে একজন প্রতিবাদী ছেলে হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। গ্রামের মানুষের যে কোনো অনিয়ম ও ব্যভিচারের বিরুদ্ধে রুবেল ছিলেন সোচ্চার কন্ঠের তরুণ।

ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর বাবা ফরিদ উদ্দিন(৫৯) কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন, আমার ছেলের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। তাতে আমরা গর্বিত। কিন্তু আমার পরিবারের সেই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সেই আমাদের অভাবের সংসারের হাল ধরেছিল। এখন কে যোগাবে সংসারের খরচ? কে থাকবে আমাদের পাশে?

এ সময় তিনি তার সন্তানকে শহিদী মর্যাদা দেয়ার পাশাপাশি সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণও দাবি করেন।