বাসস
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৫
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৩৬

শিশু রাফিয়া জানে না বাবা আর ফিরবে না, এখনও অপেক্ষা তার

প্রতিবেদন: বেলাল রিজভী 

মাদারীপুর, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস): জেলায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত রোমান বেপারীকে কোনভাবেই ভুলতে পারছেন না তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তার জন্যে পুরো জেলাবাসী গর্ববোধ করছে। কিন্তু চোখের পানি শেষ হচ্ছে না  মা রিনা বেগমের। 

দুই ভাই এক বোনের মধ্যে  রোমানই ছিল সংসারের মূল ভরসা। বাবা ওমর আলী কোন কাজ না করায় রোমানই ছিল পরিবারের একমাত্র উপর্জনকারী ব্যক্তি।

গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে খাগদী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান পিকআপ চালক রোমান বেপারী (৩২)। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আন্দোলনকারীরা তাকে মাদারীপুর শহরের খাগদী এলাকা থেকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে মাদারীপুর শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। ঘটনার দিন রাত সাড়ে দশটার দিকে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়।

সরেজমিনে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের রোমান বেপারীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে মা কোনভাবেই ছেলে হারানোর শোক ভুলতে পারছেন না। তিনি সাংবাদিকদের দেখেই বিলাপ করতে করতে বললেন, ‘দ্যাশ স্বাধীন হইছে। সবাই আনন্দ করছে। কিন্তু আমার তো আনন্দ নাই।’ 

অনেক কষ্টে তাকে শান্ত করার পর মা রিনা বেগম (৫০) বলেন, ‘আমার রোমান ১৯ জুলাই শুক্রবার সকালে পিকআপ নিয়ে  বরিশাল ট্রিপে গেছিল। দুপুরে এসে জুম্মার নামাজ পড়ছে। বলেছে, আইজ শহিদ হমু না হয় ওদের লাশ ফেলমু। এই কথা শুনে ঘর থেকে বাইরে এসে বললাম, কি হইছে বাবা ভাত খেয়ে যা, কারো সাথে ঝগড়া করিস না। বললো না মা ঝগড়া না আইতাছি। তুমি চিন্তা কইরো না। আমি আছি। চামড়ার সেন্ডেল পায়ে দিয়ে ও ঘড়ি হাতে নিয়ে চলে গেলো রোমান। আর ফিরে এলো না।’

রোমানের মা কথা শেষ না করতেই রোমানের স্ত্রী কাজল আক্তার ছয় বছরের শিশু কন্যা রাফিয়াকে নিয়ে হাজির। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে রাফিয়া। কি যেন খুঁজছে। চোখে মুখে বিষাদের ছায়া। বাবাকেই যেন খুঁজে ফিরছে সে।

রোমানের স্ত্রী কাজল আক্তার বলেন, ‘আমার ছয় বছরের মেয়ে রাফিয়া। ও এখনো বোঝে না যে ওর বাবা আর নেই। বাবা যে আর ফিরবে না অবুঝ মেয়েটা বোঝে না।

তাই বাবার জন্য রোজই আমার মেয়েটা অপেক্ষা করে। ওর এই অপেক্ষা দেখে, আমার চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিই বা করার আছে?’

রোমানের পরিবার জানায়, সরকারি কোন সাহায্য এখনও পর্যন্ত তারা পায়নি। তবে তারা আশ্বাস পেয়েছেন সরকারি সাহায্য পাওয়ার। রোমান মারা যাওয়ার পর শুধুমাত্র বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামী থেকে এক লক্ষ টাকা করে দুইবার সাহায্য ও চাল-ডাল ত্রাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া অন্য কোন সাহায্য তারা পায়নি। 

বাবা ওমর আলী বেপারী (৫৫) বলেন, আমার  ছোট ছেলে রিফাতকে যদি কোন কাজ দেওয়া যায় তাহলে আমাদের সংসারে অভাবটা দূর হবে। 

সরকারের কাছে এমনটাই প্রত্যাশা করেন ওমর আলী বেপারী।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাদারীপুরের প্রতিনিধি মো:মাসুম বিল্লাহ্ জানান, কোটা আন্দোলনের শহিদদেরকে ঢাকা শাহবাগে অবস্থিত  জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন অফিস থেকে আর্থিক সাহায্য করা হবে। এ ব্যাপারে শহিদদের বাবা-মা ও নিকট আত্মীয়কে ডেথ সার্টিফিকেটসহ যোগাযোগ করতে হবে ।

এদিকে গত ২৪ আগস্ট শহিদ রোমানের স্ত্রী কাজল আক্তার বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।