বাসস
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:২৩

এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রপ্তানির সম্ভাবনাময় পণ্যের বহুমুখীকরণ অপরিহার্য

ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ (বাসস) : স্বল্পন্নোত দেশের (এলডিসি) তালিকা উত্তীর্ণ হওয়ার পরবর্তী সময়ে রপ্তানি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পোশাকের বাইরে অন্যন্যা যেসব সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য রয়েছে সেগুলোর রপ্তানি বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ একান্তভাবে অপরিহার্য।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাকক্ষে এক সেমিনারে বক্তারা একথা বলেন। ডিসিসিআই 'এলডিসি পরবর্তী সময়ে রপ্তানি খাতের প্রস্তুতি ' শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ যত সহায়ক হবে রপ্তানি খাতে তত বেশি সাফল্য আসবে। সেই সাথে শুল্ক হার বেশি থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ব্যাহত হয়, তাই সহায়ক রাজস্ব নীতিমালার কোন বিকল্প নেই। 
তিনি রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য স্বল্প সুদে অর্থয়ান এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে একটি সহায়ক বিনিময় হার নির্ধারণ করার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ের প্রস্তুুতির জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সময়ে নেই, সরকার নীতি সহায়তা দিচ্ছে, তবে বেসরকারিখাত সামনের দিনগুলেতে একটি টেকসই দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে।       
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সুযোগও তৈরি হবে। তবে সেজন্য আমাদের যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য। নীতি সহায়তা ও সংষ্কার, অর্থায়ন, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি এবং আর্থিক খাত চ্যালেঞ্জসমূহ এর মধ্যে অন্যতম বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেলিম রায়হান বলেন, গত ৫ দশকে আমাদের রপ্তানি বাড়লেও রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্রকরণে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে, যেখানে আমাদের প্রতিযোগী দেশসমূহের অগ্রগতি অনেক বেশি। মুদ্রানীতি এবং অর্থবিষয়ক নীতিমালার সমন্বয়, সরকারী সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বাড়নো, খেলাপী ঋণ হ্রাস এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের নির্ভরতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো এলডিসি পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মত দেন। 
তিনি বলেন, বাণিজ্য বিষয়ক লজিস্টিক সেবা প্রদানে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে, যার উত্তরণ অপরিহার্য, সেই সাথে শিল্পখাতের ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা নিরিখে মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। 
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বিজিএমইএ পরিচালক ও উর্মি গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ এবং সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি অংশগ্রহণ করেন। 
বিজিএমইএ পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই পোষাক খাতের প্রণোদান প্রত্যাহার করা হলো, যদিও এখাতের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি  বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এমতাবস্থায় তিনি এখাতের প্রণোদনা সুবিধা ২০২৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার আহবান জানান। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার একটি সহায়ক এক্সচেঞ্জ রেট থাকা দরকার বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।  
সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, তৈরি পোশাক ছাড়া পাট, চামড়া ও চা প্রভৃতি পণ্যে রপ্তানি তেমন উল্লেখজনক নয়, কারণ হলো নীতি সহায়তা ও সক্ষমতার অপ্রতুলতা। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো কিভাবে তাদের রপ্তানিকারকদের সহায়তা দিচ্ছে তা অনুসরণ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবন জানান। বৈদেশিক মুদ্রার একক বিনিময় হার নির্ধারনের উপর জোরারোপ করে তিনি বলেন, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস করতে না পারলে আমাদের উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারাবে। দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আশ্বাস বাড়ালে দেশি-বিনিয়োগ বাড়বে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, তৈরি পোশাক, ঔষধ, চামড়া ও পাদুকা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট ও পাটপণ্যের মত শিল্পগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এফএমসিজি, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা-প্রকৌশল, হালাল পণ্য ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি বৃদ্ধিতে মনোযোগি হতে হবে। সম্ভাবনাময় খাত সমূহের বিকাশে ক্রেডিট ইন্স্যুরেন্স, এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ড এবং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন প্রভৃতি হতে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে আরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।   
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা জ্বালানী সহ অন্যান্য সেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, বেকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর আহবন জানান। সেই সাথে বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ‘হাই এন্ডেড’ খাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং পণ্য প্রসারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্য মেলার আয়োজনের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও আমাদের কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজতকরণ শিল্পটিকে যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার শিল্পে রূপান্তরিত করা সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।