বাসস
  ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩০
আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:১৬

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহায়তা বাড়াতে তৎপর বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল

॥ এস এম রাশিদুল ইসলাম ॥
আবুধাবি, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ (বাসস) : বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে নির্ধারিত বহুপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল চীন, জাপান, জার্মান, কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সহায়তার মাধ্যমে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ,এলডিসি উত্তোরণ পরবর্তীতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বহাল রাখা,আমদানি সহায়তা বাড়ানোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিরি উন্নতি এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণের উপর জোর দেওয়া হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে গত সোমবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হয়। আজ সম্মেলনের চতুর্থ দিন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনের সাইডলাইনে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার এই পাঁচ দেশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আজ ভারতের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করবেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। 
আহসানুল ইসলাম বাসসকে বলেন, “ডব্লিউটিও’র মত বহুপাক্ষিক ফোরামে সব দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।এখানে নির্ধারিত আলোচনার বাইরে অমাদের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সুযোগ থাকে। আমরা ইতোমধ্যে চীন,জাপান,জার্মান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আজ আলোচনা হবে ভারতের সঙ্গে।” রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ,আমদানি বিকল্প উপায় খুঁজে বের করা, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং দ্বিপাক্ষিক সহায়তার মাধ্যমে বাণিজ্য সহজ করার বিষয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়। প্রত্যেকটি দেশ বাংলাদেশের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বলে তিনি জানান।  প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস চীনকে আমরা বলেছি, তোমরা এখানে বিনিয়োগ কর এবং যেসব পণ্য আমদানি করছি, সেগুলো এখানে তৈরি কর। এখানে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে। একইসঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহায়তার মাধ্যমে আমদানি সহজ করার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি ।’ তিনি মনে করেন, দ্বিপাক্ষিক সহায়তার মাধ্যমে আমদানি সহজ করতে না পারলে কাঁচামাল আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়বে। যা আমাদের অর্থনীতি বিশেষত কর্মসংস্থানের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। 
কোরিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ স্থানান্তরের আহবান জানানো হয়। আহসানুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে কোরিয়ার বিনিয়োগ বাড়াতে বলেছি। তাঁরা এখানে পণ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে। বিনিয়োগ উপযোগি সুযোগ-সুবিধা দিতে পারলে, তাঁরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে বলে আমাদেরকে জানিয়েছে। সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বৈঠকে তাঁদের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে বন্দর আধুনিকায়ক ও ডিজিটাল ডকুমেন্টেশনের উপর জোর দেন। বন্দরে আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা গেলে পণ্য খালাস সহজ হবে। এসব বিষয়ে তাঁরা সহায়তা করতে চান বলে আহসানুল ইসলাম জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এলডিসি উত্তোরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের নিজেদের প্রস্তুতি গ্রহণ করাটা বেশি জরুরি। আমাদের আর পেছানোর সুযোগ নেই, তাই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কিভাবে নেওয়া যায়, সরকার সে বিষয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। তিনি জানান, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আমদানি সহায়তা এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের সহায়তা চাওয়া হবে।
এলডিসি উত্তোরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের সাইটলাইনে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এর সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এলডিসি উত্তোরণ পরবর্তী সময়ে শুল্কমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার ও বিরোধ নিস্পত্তির সুবিধা বহাল রাখা, দ্বিপাক্ষিক ক্রেডিট লাইন ঋণ সুবিধার আওতায় আমদানি সহায়তার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার উপর বিদ্যমান চাপ কমানো এবং এলডিসি উত্তোরণের পরেও কারিগরি সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের দ্বিপাক্ষিক আলোচনাগুলো সময়োপযোগি এবং জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এলডিসি উত্তোরণকারি দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি কিন্তু ডব্লিউটিওর আলোচনায় সংস্থাটির পক্ষ থেকে উন্নত দেশগুলোকে বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশকে প্রত্যেকটি দেশের সঙ্গে আলাদাভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা খুবই প্রয়োজন, যেটা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এখন করছেন।  
ডব্লিউটিওর ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন গত সোমবার শুরু হয়, চার দিনব্যাপী সম্মেলন আজ আবুধাবির স্থানীয় সময় রাত ১২টায় শেষ হওয়ার কথা। সম্মেলনে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। আলোচনা চলছে। তবে আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে ডব্লিউটিও সদস্য দেশগুলো কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারলে, সম্মেলন আরও একদিন বাড়তে পারে।   
ডব্লিউটিওর সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের এবারের সম্মেলনে ১৬৪টি দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেছেন।বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবারের সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন। বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। এবারের সম্মেলনে এলডিসি উত্তোরণের পরেও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা,কৃষি ও মৎস্যখাতে ভর্তুকি এবং মেধাস্বত্ত সুবিধা বহাল রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ জোর দিচ্ছে।