বাসস
  ১২ মার্চ ২০২৪, ১৯:৫৫

দ্বৈত কর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে নেদারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি সই

ঢাকা, ১২ মার্চ, ২০২৪ (বাসস) :  বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে বিদ্যমান দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং নেদারলান্ডসের পক্ষে দেশটির মিনিস্ট্রি ফর ট্যাক্স অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড দ্যা ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এম এল এ ভ্যান রিজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে  চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। এ সময় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত চুক্তি প্রায় ৩০ বছর আগে ১৯৯৩ সালের ১৩ জুলাই স্বাক্ষরিত হয়। ইতোমধ্যে দ্বৈত কর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি যেমন ওইসিডি মডেল কিংবা ইউএন মডেলেও নানাবিধ পরিবর্তন এসেছে।
এছাড়া বাংলাদেশও স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাজুয়েশন পিরিয়ড অতিক্রম করছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন দেশের সাথে সই করা দ্বৈত কর পরিহার সংক্রান্ত চুক্তিগুলোর অসামঞ্জস্যতা দূর করতে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে চুক্তিগুলো সংশোধনের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে ইতোপূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি সংশোধন করে নতুন চুক্তি সম্পাদন করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে স্বাক্ষরিত নতুন চুক্তিতে ৩৩টি আর্টিকেল রয়েছে। এর মধ্যে করের আওতা বিস্তৃত করতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আর্টিকেলে যেমন পরিবর্তন আনা হয়েছে, একইসাথে নতুন নতুন সেক্টর থেকে কর আহরণের জন্য কিছু নতুন আর্টিকেল সংযোজন করা হয়েছে।
 নতুন চুক্তিতে শুধু রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে করমুক্ত সুবিধা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। নতুন আর্টিকেল অন্তর্ভুক্ত করার ফলে সার্ভিস তথা সেবার বিপরীতে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হারে কর আহরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
শেয়ার হস্তান্তর বাবদ অর্জিত মূলধনী মুনাফা বাংলাদেশে করযোগ্য হওয়ার শর্ত নতুন চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে সোর্স দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে অর্জিত মূলধনী লাভ থেকে কর আহরণ করা সম্ভব হবে।
বিদ্যমান চুক্তির কোন আর্টিকেলের সাথে সম্পৃক্ত নয়, এমন আয়করদাতা যে দেশের নিবাসী, সে দেশে কর আরোপ করার বিধান রয়েছে। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে নতুন চুক্তিতে এটি সংশোধন করে, যে দেশে এমন আয় উদ্ভুত হবে- সে দেশে কর আরোপ করার বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া কর দাবি আদায়ে সহযোগিতার নিমিত্ত এই আর্টিকেলটি নতুন সংযোজন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চুক্তি সম্পাদনকারী উভয় রাষ্ট্র রাজস্ব আদায়ে একে অপরকে সহযোগিতা করার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন,  বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্বমুলক সম্পর্ক অত্যন্ত উন্নত। বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের ১৫টি সহযোগী দেশের মধ্যে অন্যতম। নেদারল্যান্ডস ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের নবম রপ্তানিকারক বৃহত্তর অংশীদার দেশ- যার রপ্তানির পরিমাণ ২ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক।
তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে- নিটওয়্যার, ওভেন, গার্মেন্টস, গলদা চিংড়ি, জুতা, বস্ত্র, চামড়াজাত পণ্য ও বাইসাইকেল ইত্যাদি। অপরদিকে বাংলাদেশ ২০২২-২৩ অর্থবছরে নেদারল্যান্ডস থেকে ৩০০ মিলিয়ন অধিক পণ্য আমদানি করেছে। যার মধ্যে রয়েছে- ক্যাপিটাল মেশিনারি, শাক-সবজি, তৈরী খাদ্য উপাদান, জীবিত প্রাণি (পশু ও পাখি), খনিজ দ্রব্যাদি, কেমিক্যালস, ঔষধ সামগ্রী, অর্গানিক কেমিক্যালস, প্লাস্টিক ও রাবার ইত্যাদি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের স্থান চতুর্থ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশে ২৫৬০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের অধিক বিনিয়োগ করেছে। জ্বালানি, বাণিজ্য, চামড়া খাত, চামড়াজাত পণ্য-সামগ্রী ও সিমেন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।