বাসস
  ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১৯:৩২
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১৯:৩৫

নিত্যপণ্যের বাজারে কমিশন এজেন্টস প্রথা বন্ধের দাবি

চট্টগ্রাম, ১৩ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস): নিত্যপণ্যের বাজারে কমিশন এজেন্টস প্রথা বন্ধের দাবিতে আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের এক মতবিনিময় সভা এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। 
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত সভায় এ দাবি উত্থাপন করা হয়। 
সভায় বলা হয়, ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম হলেও নানা স্তরে নানা ধরনের চাঁদাবাজি ও খরচের পাল্লা ভারী করে নিত্যপণ্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির নানা খাত-উপখাত সৃষ্টি করে একটি মহল সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। নিত্যপণ্যের বাজারে কমিশন এজন্টেস প্রথার মতো যুগ যুগ ধরে চলমান চাঁদাবাজির ঘটনার কারণে কোন প্রকার বিনিয়োগ ছাড়াই একটি পক্ষ শুধুমাত্র তাদের আড়তে পণ্য রেখে বিক্রি করতে গিয়ে কেজি প্রতি ৬ দশমিক ২৫ টাকা মুনাফা আদায় করছেন, যার পুরো দায় নিতে হচ্ছে দেশের ভোক্তাদেরকে। এ কারণে বগুড়ায় ২০ টাকার বেগুন ভোক্তারা ঢাকার বাজারে ১০০ টাকায় কিনতে বাধ্য হতে হচ্ছে। ক্যাবসহ ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরও মনে করে যে, কমিশন এজেন্টস প্রথা, ডিও/স্লিপ প্রথার মতো অবৈধ চর্চার কারণে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে একটি চক্র বিপুল অংক হাতিয়ে নিচ্ছে। এ চক্রটি একটা সময় আমদানিকৃত পেয়াঁজ নিয়ে সক্রিয় হলে তাদের পদাংক অনুসরণ করে বর্তমানে তারা আলু, মসলা, সবজিসহ নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে কোন প্রকার বিনিয়োগ ছাড়াই বিপুল অংক হাতিয়ে নিচ্ছে। 
রেয়াজ উদ্দীন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলীর সঞ্চালনায় ও সমিতির সভাপতি আলহাজ রশিদ আহমদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজউল্যাহ। মুখ্য আলোচক ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন। আলোচনায় অংশ নেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মাহরাফ, ভোক্তা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক নাসরীন আক্তান, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব চান্দগাও থানা সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহনগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, ক্যাব যুব গ্রুপের রাসেল উদ্দীন, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সভাপতি ইলিয়াছ ভুইয়া, রেয়াজ উদ্দীন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা মোহাম্মদ তারেক, সহ-সভাপতি আলহাজ কামাল উদ্দীন, আবু তৈয়ব, ক্যাব পাঁচলাইশের সভাপতি সায়মা হক, আবদুল আওয়াল, ক্যাব সদরঘাটের মোস্তফা কামাল, সদরঘাট থানা হিন্দু বৌদ্ধ, খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুবল দাস প্রমুখ।  
মতবিনিময় সভায় আড়তদার কল্যাণ সমিতি নেতৃবৃন্দ বৃটিশ আমল থেকে চলমান এজেন্টস প্রথা বহাল রাখার নানা যুক্তি দেখালেও এই যুক্তির পক্ষে জোরালো কোন প্রমাণ ও আইনগত ভিত্তি দেখাতে পারেননি। তারা বেপারি ও কৃষকের কাছ থেকে ক্রয়কৃত পণ্যের রশিদ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেন। একই সাথে কৃষিপণ্যের জন্য অগ্রিম দাদন দিয়ে থাকেন বলে দাবি করেন। তবে মূল্য নির্ধারণে তাদের কোন হাত নেই উল্লেখ করে বলেন, চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে বাজারে দাম নির্ধারিত হয়। কিন্তু ক্যাব ও ভোক্তা অধিদপ্তরের বাজার পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, আড়তদাররা ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ধরণের ভূমিকা পালন করেন। দাম বাড়লেই তারা পণ্যের মালিক হয়ে যান, আবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন বাজারে অভিযান চালালে তারা শুধুমাত্র গুদাম ভাড়ার অংশ পান বলে দাবি করেন। আর সব দোষ চাপান বেপারি ও কৃষকের ঘাড়ে। আড়তদার ও কমিশন এজন্টেদের এই দ্বৈত ভূমিকার কারণে বাজার অস্থির হয়ে উঠে। বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা সরবরাহ কমিয়ে দেন। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে অবিলম্বে ব্যবসা বাণিজ্যে সংস্কার করে মধ্যস্বত্বভোগীদের অপতৎপরতা বন্ধ করে অবিলম্বে কমিশন এজন্টেস ও স্লিপ প্রথা বন্ধ করতে হবে। কোন প্রকার ক্রয়-বিক্রয় রশিদ ছাড়া পণ্য বিক্রি করা যাবে না। একই সাথে কৃষকদের মাঝে দাদন বা অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য কেনা বন্ধ করতে হবে। কৃষকদের মাঝে ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণের পর্যাপ্ত যোগান নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ ধরনের ফটকা কার্যক্রম বন্ধ করে ব্যবসা বাণিজ্যে শৃংখলা ফেরানো সম্ভব হবে। 
সভায় আরও বলা হয়, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সবগুলি পণ্যের দাম কম ছিল। ঐ সময়টিতে স্থানীয় চাঁদাবাজি না থাকাকে বড় কারণ দেখানো হলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার চাল, আলু, কাঁচা মরিচ, পেয়াঁজসহ শাক-সবজিসহ সবগুলো নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। তাই ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যুত্থানকে সফল করতে বড় করপোরেট হাউসগুলোর একতরফা আধিপত্য বিস্তার বন্ধসহ বিগত সরকারের আমলে তারা কি পরিমাণ অর্থ লোপাট করেছে তার অনুসন্ধান ও তাদের রাষ্ট্র মেরামতে বিনিয়োগ করার দাবি জানানো হয়।