বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনে ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করার আহ্বান ঢাকা চেম্বারের

বাসস
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:০৭
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলের ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে ঢাকা চেম্বারের উদ্যোগে ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় । ছবি : ডিসিসিআই

ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করা এবং আইনী প্রক্রিয়ার সংষ্কার একান্ত অপরিহার্য।

তিনি বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতায় বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ব বিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থার আলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি আনতে একটি আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন এবং আইনী প্রক্রিয়ার সংষ্কার একান্ত অপরিহার্য।

আজ রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এদেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

তিনি বলেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও, বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ যদি প্রথাগত আদলতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদলতের উপর চাপ কমবে, সেই সাথে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে।

তিনি আরও বলেন, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বাণিজ্য বিষয়ক আদালতসমূহে বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংষ্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বাংলাদেশ নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনী প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এ ধরণের সংস্কার দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের দিকে যাচ্ছে এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য কাজ করছে। তবে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষনে কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন করতে হবে, যা বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়াগ সম্প্রসারিত করবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে সরকার এ বিষয়টির উপর অগ্রাধিকার হিসেবে গুরুত্ব দিবে। বাংলাদেশের আরবিট্রেশন কার্যক্রমে গতি আসলে বিনিয়োগ স্থবিরতা হ্রাস পাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের লজিস্টিক ও শিপিং খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শুধু যে এফডিআই আকর্ষন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়। বরং বিষয়টি আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে।

বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে চলমান আদালতের কার্যক্রমের বাইরে ‘আইনী সংস্থা’ তৈরি করা যেতে পারে বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন। 

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র (বিডা) মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর পার্টনার ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন অংশগ্রহণ করেন।

বিডা’র মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক বলেন, শুধুমাত্র আইন করলেই হবে না, এর সাথে প্রাসঙ্গিক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করার বিষয়ে মনোনিবেশ করতে হবে।

বিয়াক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান জানান, বিশেষ করে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজাহ অ্যান্ড থান এর কো-হেড ভিকনা রাজা বলেন, অবকাঠামো, দক্ষ মানবসম্পদ, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে শক্তিশালী কাঠামোর কারণে সিঙ্গাপুরে বৈদেশিক বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়ছে। 

তিনি বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষনে আইনী কাঠামোর আমূল সংস্কারের কোন বিকল্প নেই। সেই সাথে স্পেশালাইজড কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন ও আরবিট্রেশন আইন সংস্কারের উপর তিনি জোরারোপ করেন।

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বাণিজ্যিক আদালত পরিচালনায় বাণিজ্য বিরোধ বিষয়ক অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ প্রদানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ প্রদান করা প্রয়োজন।

মুক্ত আলোনায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারের আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে এবং এ অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বাণিজ্যিক বিরোধগুলো সমাধানে আদালতে না গিয়ে, আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডারবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
রাজশাহীতে কনস্টেবলদের ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত
হারিয়ে যাওয়া ৫০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ
রাজধানীতে বিভিন্ন অপরাধে ৫০ জন গ্রেফতার 
খুলনায় রেণু পোনা ব্যবহার ও ভেজাল চিংড়ি প্রতিরোধে মতবিনিময়
নৌপরিবহন উপদেষ্টার সাথে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
আগা খান পদক বিজয়ী মেরিনা তাবাসসুমকে সংস্কৃতি উপদেষ্টার অভিনন্দন
দ্বিতীয়বার আগা খান আর্কিটেকচার অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় মেরিনা তাবাসসুমকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
মিয়ানমারে নতুন করে নৃশংসতার বিষয়ে সতর্ক করলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান
মহাখালীতে কিডনি কেয়ার সেন্টার স্থাপনে ডিএনসিসি ও সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনের চুক্তি
রাজশাহী ও বাগেরহাটে দুদকের অভিযান : দুর্নীতি ও অনিয়মের সত্যতা মিলেছে
১০