নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ‘ফাঙ্গাল সুপারবাগ’ আতঙ্ক

বাসস
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:২৭
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৯ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ‘ফাঙ্গাল সুপারবাগ’ হিসেবে পরিচিত ক্যান্ডিডা অরিস ছত্রাকের বিস্তার উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। 

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নাল মাইক্রোবায়োলজি স্পেকট্রাম-এ প্রকাশিত আইসিডিডিআর,বি-র এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে কিছু হাসপাতালের এনআইসিইউতে এই প্রাণঘাতী ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ছে।

গবেষণাটি পরিচালিত হয় আইসিডিডিআর,বি, রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর সহযোগিতায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর অর্থায়নে। এতে ঢাকা শহরের দুটি তৃতীয় স্তরের হাসপাতালের এনআইসিইউ পর্যবেক্ষণ করা হয় ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

গবেষণায় ৩৭৪ জন নবজাতককে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাদের মধ্যে ৩২ জনের (৯ শতাংশ) ত্বকে ক্যান্ডিডা অরিস পাওয়া যায় এবং একজন (০.৩ শতাংশ) নবজাতকের রক্তে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। 

আক্রান্ত ৩২ জনের মধ্যে ১৪ জন ভর্তি হওয়ার সময়ই সংক্রমিত ছিলেন। আর ১৮ জন ভর্তি হওয়ার পর এনআইসিইউতেই সংক্রমিত হন। ভর্তি অবস্থায় সংক্রমিত ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জন অন্য ওয়ার্ড থেকে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে ছত্রাকটি হাসপাতালের ভেতরেই ছড়াচ্ছে।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, সংক্রমিত শিশুদের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে একজনের রক্তে সংক্রমিত ছিল। এটি প্রমাণ করে যে, এনআইসিইউ-তে ক্যান্ডিডা অরিস সংক্রমণ নিয়মিতভাবে ঘটছে এবং এর প্রভাবে নবজাতকদের মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে এই ছত্রাককে ‘হাসপাতাল-সম্পর্কিত সুপারবাগ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এটি দীর্ঘ সময় হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও পরিবেশে টিকে থাকতে পারে এবং সাধারণ জীবাণুনাশক দিয়ে ধ্বংস করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি ২০১৯ সালে ক্যান্ডিডা অরিসকে ‘অতিজরুরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হুমকি’ হিসেবে ঘোষণা করে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ক্যান্ডিডা অরিসের মাত্র ৯ শতাংশ নমুনা একাধিক অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রতিরোধী ছিল, তবে ৮২ শতাংশ নমুনা ফ্লুকোনাজোল প্রতিরোধী, যা ছত্রাকজনিত সংক্রমণে প্রথম সারির ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া দেখা যায়, আক্রান্ত নবজাতকদের ৮১ শতাংশের জন্ম হয়েছিল সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে। গবেষকরা ধারণা করছেন, সিজারিয়ান ডেলিভারির পর দীর্ঘ সময় হাসপাতালে অবস্থান করার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আইসিডিডিআর,বি-র সংক্রামক রোগ বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী ও এএমআর রিসার্চ ইউনিটের প্রধান ডা. ফাহমিদা চৌধুরী বলেন, ‘এই গবেষণা এনআইসিইউ-তে গুরুতর অসুস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতকদের মধ্যে ক্যান্ডিডা অরিস সংক্রমণের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। এটি প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

গবেষকরা সুপারিশ করেছেন, এনআইসিইউসহ হাসপাতালের পরিবেশে নিয়মিতভাবে ক্লোরিন-ভিত্তিক জীবাণুনাশক ব্যবহার করে যন্ত্রপাতি ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের হাত ধোয়ার অভ্যাস আরও উন্নত করতে হবে।

তারা আরও বলেন, এনআইসিইউতে এই সংক্রমণ প্রতিরোধে ধারাবাহিক নজরদারি জোরদার করতে হবে, যাতে আক্রান্ত নবজাতকদের দ্রুত শনাক্ত করে আলাদা রাখা যায় এবং সময়মতো অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সুপার টাইফুন ফাং-ওয়ং ফিলিপাইনে আঘাত হেনেছে
আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে আমাদের জন্য মাইলফলক: সিইসি
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নিয়মে পরীক্ষার প্রজ্ঞাপন জারি
খুলনায় দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ
দুদকের তিনটি অভিযান: বিদ্যুৎ, জলবায়ু তহবিল ও স্বাস্থ্যসেবায় অনিয়ম 
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ১০৩৭ মামলা
ঢাকা-সিউল অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গঠনে সিইপিএ গুরুত্বপূর্ণ : রাষ্ট্রদূত
নিষিদ্ধ পলিথিন নিয়ন্ত্রণ অভিযানে জরিমানা ৫ লাখ; পলিথিন জব্দ ৩ হাজার কেজি
চবিতে নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নে পাঁচদিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজে ম্যাচ অফিসিয়ালের তালিকায় জেসি
১০