বাসস
  ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:২২
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:২৪

মাদক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের তৃতীয় দিনে ইকুয়েডর ‘যুদ্ধ অবস্থায়’

কুইটো, ১১ জানুয়ারি, ২০২৪ (বাসস ডেস্ক) : মাদক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে বিপুল সামরিক সদস্য মোতায়েন করায় কুইটোর রাস্তাগুলো জনশূন্য হয়ে পড়েছে। ইকুয়েডর বুধবার এটিকে দেশটির জন্য ‘যুদ্ধ অবস্থা’ বলে উল্লেখ করেছে। মাদক অপরাধী চক্রের অপহরণ এবং নৃশংস হামলার জবাবে সরকার এই অভিযান শুরু করেছে।
রাজধানী কুইটোতে শত শত সৈন্য টহল দিচ্ছে, মাদক অপরাধী চক্রের ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় নগরীর বাসিন্দারা অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
আন্তঃমহাদেশীয় মাদকপাচারকারী চক্রের ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণের পর দক্ষিণ আমেরিকার ছোট এই দেশটি সঙ্কটে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এই চক্র দেশটির বন্দর ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে কোকেন পাচার করে আসছে। দেশটির শীর্ষ শক্তিশালী মাদক বস, ‘ফিটো’ নামে পরিচিত হোসে অ্যাডলফো ম্যাকিয়াসের কারাগার থেকে পালানোর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে রোববার সর্বশেষ এই ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।   
প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া সোমবার জরুরী অবস্থা এবং রাতে কারফিউ জারি করেন। কিন্তু মাদক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকারের এই ‘যুদ্ধ’ ঘোষণার সাথে সাথে মাদক গ্যাংরা পাল্টা হামলা শুরু করে। তারা বেসামরিক লোক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর  সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয়।
মাদক গ্যাং কারাগারে অসংখ্য দাঙ্গার প্ররোচনা দিয়েছে, প্রকাশ্যে জনসমাগম স্থলে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এবং হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছে।
এসএনএআই কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১০০ জনেরও বেশি কারারক্ষী এবং প্রশাসনিক কর্মীদের জিম্মি করা হয়েছে।
গুয়াকিল বন্দর নগরীতে মুখোশ পরিহিত হামলাকারীরা মঙ্গলবার একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টিভি স্টেশনে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও কর্মচারীকে জিম্মি করে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, হামলাকারীদের কয়েকজনের বয়স ১৬ বছরের মধ্যে।
এই হামলা বিশেষ করে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই নিরাপত্তার জন্য কাজ ছেড়ে দিয়েছে। দোকান বন্ধ করে দিয়েছে এবং বাড়িতে অবস্থান নিচ্ছে।
নোবোয়া বুধবার বলেছেন, দেশটি এখন ‘যুদ্ধের অবস্থায়’ রয়েছে। তিনি গ্যাংদের কাছে নতি স্বীকার না করার অঙ্গীকার করেছেন।
৩৬ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট দুই মাসেরও কম সময়ের দায়িত্বে এসেছেন। তিনি অপরাধী গোষ্ঠীগুলোকে ‘নিষ্ক্রিয়’ করার আদেশ দিয়েছেন। এই মাদক চক্রের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার ।
নোবোয়া বুধবার রেডিও ক্যানেলাকে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের অবস্থায় আছি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে হার মানতে পারি না।’ তিনি এই ‘সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে মোকাবেলা করার’ অঙ্গীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘এই সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কেউ নিতে চায়নি।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিকের মতে ‘দেশের অবনতিশীল পরিস্থিতির পাশাপাশি ইকুয়েডরবাসীদের জীবনে এর অশুভ প্রভাবের কারণে খুবই উদ্বিগ্ন।’
লাতিন আমেরিকার শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক ব্রায়ান নিকোলস বলেছেন, ওয়াশিংটন ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’। যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা প্রদানের এবং নোবোয়ার দলের সাথে ‘ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে রাখার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইকুয়েডরে চীনের দূতাবাস এবং কনস্যুলেটগুলোতে জনসাধারণের জন্য পরিষেবা স্থগিত করেছে। অন্যদিকে ফ্রান্স এবং রাশিয়া নাগরিকদের দেশটিতে ভ্রমণের বিরুদ্ধে পরামর্শ দিয়েছে।
পেরু ইকুয়েডরের সাথে তার সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। সীমান্ত সুরক্ষিত করতে অতিরিক্ত ৫০০ পুলিশ এবং সৈন্য পাঠিয়েছে। কলম্বিয়ার সেনাবাহিনীও ঘোষণা করেছে যে, তারা সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করছে।