ঢাকা, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) শুক্রবার প্রথমবারের মতো বৈশ্বিকভাবে ডায়াবেটিস ও স্থূলতা চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ওজন কমানোর ওষুধগুলোর সুপারিশ করেছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এগুলোর সাশ্রয়ী মূল্যের জেনেরিক সংস্করণ সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছে।
প্যারিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ক্ষুধা-নিবারক ওষুধ ‘জিএলপি-১ অ্যাগোনিস্ট’ ওজন কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখায় এটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ওজেম্পিক, ওয়েগোভি ও মাউঞ্জারো ব্র্যান্ডগুলো এই ওষুধের অন্তর্ভুক্ত।
ডব্লিউএইচও’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা-সম্পর্কিত রোগে ৩৭ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়, যা ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা ও এইচআইভি’র সম্মিলিত মৃত্যুর চেয়েও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে এ ওষুধ গ্রহণে মাসে এক হাজার ডলার খরচ হয়। আশঙ্কা রয়েছে, দরিদ্র দেশগুলোতে এগুলো সহজলভ্য হবে না। অথচ এ ওষুধ সেখানেই সবচেয়ে বেশি জীবন বাঁচাতে পারে।
শুক্রবার ডব্লিউএইচও ড্যানিশ ওষুধ নির্মাতা নোভো নরডিস্কের ওজেম্পিক ও ওয়েগোভির সক্রিয় উপাদান সেমাগ্লুটাইড এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইলি লিলির মাউঞ্জারোতে ব্যবহৃত লিরাগ্লুটাইডকে বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য জরুরি ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
এই ‘জীবনরক্ষাকারী’ ইনজেকশন যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তাদের কাছে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে ডব্লিউএইচও এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মূল্য কমাতে জেনেরিক প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা দরকার।’
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি গবেষক অ্যান্ড্রু হিল বলেন, ভারতে জেনেরিক সেমাগ্লুটাইড মাসে মাত্র ৪ ডলারে ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব।
তিনি বলেন, আমরা চাই নোভার্টিস ও ইলি লিলি দায়িত্বশীল আচরণ করুক এবং তাদের চিকিৎসা বিশ্বব্যাপী সাশ্রয়ী জেনেরিক দামে সরবরাহ করুক।
আগামী বছর কানাডা, ভারত ও চীনসহ কয়েকটি দেশে সেমাগ্লুটাইডের পেটেন্ট শেষ হবে। এতে জেনেরিক উৎপাদন বাড়তে পারে।
ডায়াবেটিসের জন্য তৈরি এসব জিএলপি-১ ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। যেমন- বমি বমি ভাব। তবে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এগুলো নেশায় আসক্তিসহ স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যার চিকিৎসায়ও সহায়ক হতে পারে।
এ সপ্তাহে জেএএমএ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা এসব ওষুধ সেবনের ফলে হাসপাতালে ভর্তি বা অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ৪০ শতাংশের বেশি কমেছে।
বর্তমানে বিশ্বে প্রতি আটজনের একজন স্থূলতায় ভুগছে। ২০২২ সালে ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
ডব্লিউএইচও তাদের জরুরি ওষুধের তালিকায় বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ওষুধও অন্তর্ভুক্ত করেছে।