
ঢাকা, ৯ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে রাশিয়ার হামলার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা শূন্য হয়ে যাওয়ার পর রোববার তাপ ও আলো পুনরুদ্ধারে লড়াই করছে ইউক্রেন।
কিয়েভ থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
সাম্প্রতিক ইউক্রেনের অবকাঠামোতে হামলা বৃদ্ধি করেছে মস্কো। এটি শনিবার রাতে ইউক্রেন জুড়ে জ্বালানি স্থাপনাগুলোয় কয়েক শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।
হামলার ফলে বেশ ক’টি শহরে বিদ্যুৎ, তাপ ও পানি সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সংস্থা সেন্টারেনার্গো সতর্ক করেছে যে, এই হামলার ফলে উৎপাদন শূন্যে নেমে এসেছে।
রোববার ইউক্রেনের বেশিরভাগ অঞ্চল দিনে আট থেকে ১৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ইউক্রেনারগো জানিয়েছে, মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হবে ও জ্বালানি সরবরাহের উৎস পরিবর্তন করা হবে।
ইউক্রেনের জ্বালানিমন্ত্রী স্বিতলানা গ্রিনচুক শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও, কিয়েভ, দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক, দোনেৎস্ক, খারকিভ, পোলতাভা, চেরনিগিভ ও সুমিসহ অঞ্চলগুলোয় নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভ্রাট অব্যাহত থাকতে পারে।
স্বিতলানা গ্রিনচুক স্থানীয় সম্প্রচারক ইউনাইটেড নিউজকে বলেন, শত্রুরা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে, যা ধ্বংস করা অত্যন্ত কঠিন।
কিয়েভের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেন, রাশিয়ান ড্রোনগুলো পশ্চিম ইউক্রেনের অভ্যন্তরে দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ সাবস্টেশনকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। তিনি জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে এর প্রতিক্রিয়া জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, লুতস্ক থেকে যথাক্রমে ১২০ ও ৯৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত খমেলনিৎস্কি ও রিভনে পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোয় সাবস্টেশনগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ করত।
তিনি শনিবার রাতে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার কথা উল্লেখ করে টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ইউরোপের পারমাণবিক নিরাপত্তাকে বিপন্ন করছে। আমরা এই অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকির প্রতিক্রিয়া জানাতে ও এইএ বোর্ড অফ গভর্নরদের একটি জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানাচ্ছি।’
ঐতিহ্যগতভাবে রাশিয়ার তেলের বৃহৎ ক্রেতা চীন ও ভারতকেও মস্কোকে তার হামলা বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাইবিহা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা ইউক্রেনকে শীতের মাসগুলোর আগে তাপ বিভ্রাটের ঝুঁকিতে ফেলেছে।
রাশিয়া তার প্রায় চার বছর জুড়ে হামলায় বিদ্যুৎ ও তাপ গ্রিড লক্ষ্যবস্তু করেছে,যার ফলে মূল বেসামরিক অবকাঠামোর একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইউক্রেনের জ্বালানি সংস্থা নাফটোগাজ জানিয়েছে, শনিবার রাতের এই হামলা ছিল অক্টোবরের শুরু থেকে গ্যাস অবকাঠামোর ওপর নবম বিশাল হামলা।
কিয়েভের স্কুল অফ ইকোনমিক্স একটি প্রতিবেদনে অনুমান তুলে ধরেছে যে, হামলাগুলো ইউক্রেনের প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের অর্ধেক বন্ধ করে দিয়েছে।
ইউক্রেনের শীর্ষ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ওলেক্সান্ডার খারচেঙ্কো বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যদি কিয়েভের দুটি বিদ্যুৎ ও তাপীকরণ কেন্দ্র তিন দিনেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে এবং তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়, তাহলে রাজধানী প্রযুক্তিগত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।
মস্কোর গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি রফতানি বন্ধ করে দিতে ও দেশজুড়ে জ্বালানি ঘাটতি তৈরি করতে সম্প্রতি রাশিয়ার তেল ডিপো ও শোধনাগারগুলোয় হামলা জোরদার করেছে ইউক্রেন।