
ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ভারত মহাসাগরের ফরাসি দ্বীপপুঞ্জ মায়োতে এখনো চিডো ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যেই বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বাড়ছে।
মামুদজু থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
রাজধানীর সমুদ্রতীরের এক রেস্তোরাঁয় কাজ করেন মেলি রাজাফিনদ্রাসোয়া। তিনি বলেন, ৯০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর কিছু ক্রেতা ফিরতে শুরু করায় তিনি স্বস্তি পেয়েছেন।
কিন্তু নিজের ঘর মেরামতের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ এখনো কোনো বীমা অর্থ পাননি তিনি। চিডো বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, ধ্বংস করে হাজারো ঘরবাড়ি ও প্রধান দ্বীপের অর্ধেক প্রবালপ্রাচীর।
তিনি জানান, ঝড়ে তাদের বাড়ির জানালা আর একটি দরজা উড়ে গিয়েছিল। তা নিজেরাই মেরামত করেছেন। কিন্তু বৃষ্টি হলেই শোবার ঘরে পানি ঢুকে পড়ে। এখন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় তিনি আতঙ্কে থাকেন।
বর্ষা শুরু হতেই তার প্রভাবও দেখা যাচ্ছে।
রাজাফিনদ্রাসোয়া বলেন, ‘শেষবার প্রচণ্ড বাতাস আর বৃষ্টি হয়েছিল। আমার সন্তানরাও এখনো চিডোর সেই ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।’
মায়োতের বিভিন্ন এলাকায় এখনো ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট। সাড়ে ৩ লাখের বেশি জনসংখ্যার এই অঞ্চলের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। মামুদজু’র অভিজাত এলাকাতেও রাস্তাজুড়ে পড়ে আছে ধ্বংসাবশেষ।
মাত্র পাঁচ বছর আগে নির্মিত একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনও গত ১৪ ডিসেম্বরের চিডো ঘূর্ণিঝড়ে বড় ধরণের ক্ষতির শিকার হয়। আশপাশে পড়ে আছে ধাতব ফ্রেম, প্লাস্টার বোর্ড ও কাঠের তক্তা। ছাদ উড়ে যায়, ধ্বংস হয় ওপরতলার সব অ্যাপার্টমেন্ট।
ভবনটির নিচতলার বাসিন্দা আনলি বলেন, বৃষ্টির পানি এখনো সিলিং দিয়ে ঢুকে পড়ে। এখনো কিছুই মেরামত করা হয়নি।
ঘূর্ণিঝড়ের পর বিদ্যালয়গুলো দ্রুত পুনর্নির্মাণে ফরাসি কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলেও বহু বাড়ি ও সরকারি ভবন এখনো মেরামতের অপেক্ষায় রয়েছে।
আবাসন বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ‘ফাউন্ডেশন ফর হাউজিং’ জানায়, মায়োতের প্রায় ৬০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
মায়োতের প্রধান আবাসন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘সোসিয়েতে ইমোবিলিয়েরে দ্য মায়োত’-এর প্রধান আহমেদ আলি মন্দ্রোহা বলেন, তাদের ১ হাজার ৬০০ ভাড়াবাড়ির মধ্যে প্রায় ৫০০টি মেরামত করা হয়েছে, ৬০০টির কাজ এখনো বাকি।
মায়োতের বিল্ডিং ফেডারেশনের সভাপতি জুলিয়ান শঁপিয়া জানান, আগে যেখানে নির্মাণসামগ্রী পৌঁছাতে দুই মাস লাগত, চিডো আঘাতের কারণে এখন সময় লাগছে চার মাস।
মূল বন্দর লংগোনিতে কনটেইনারের জটের কারণে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সেও দেরি হচ্ছে।
ফ্রান্সের প্রধান ব্যবসায়ী সংগঠন মেডেফ-এর মায়োতে শাখার প্রধান ফাহারদিন মোহামেদ বলেন,‘এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক।’
ঘূর্ণিঝড় অর্থনীতিতেও বড় আঘাত হেনেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই অতিরিক্ত খরচ বহন করতে পারছে না।
ফ্রান্সের প্রধান ব্যবসায়ী সংগঠন মেডেফ-এর মায়োতে শাখার প্রধান ফাহারদিন মোহামেদ বলেন, ‘এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক।’
মায়োতের মোট অর্থনীতির প্রায় ৭০ শতাংশ আসে সরকারি খাত থেকে সেখানেও এখন তহবিল সংকট রয়েছে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কাছের একটি সরকারি দপ্তরের কর্মী জানান, তার অফিসও ব্যবহারযোগ্য নয়। চারদিকে পানি ঢুকে পড়েছে, বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়।
তিনি বলেন, এখনো কিছুই ঠিক হয়নি। কর্তৃপক্ষের হাতেও অর্থ নেই।
হাউজিং ফাউন্ডেশন জানায়, বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও মায়োতের হাজারো মানুষ এখনো মানসম্মত ও বাসযোগ্য ঘর পাচ্ছেন না।