অদম্য সাহসী 'রাহিমে'র ডাকেই রাজপথে নামে ভোলার ছাত্রজনতা 

বাসস
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৫:০৪
মো. রাহিম ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

/ আল-আমিন শাহরিয়ার /

ভোলা, ২৭ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : উত্তাল জুলাই বিল্পবের অগ্নিঝরা সেই দিনগুলোতে জীবন বাজি রেখে যেসব নওজোয়ান সন্তানেরা মায়ের আঁচল ছেড়ে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে রাজপথে নেমে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, মো. রাহিম ইসলাম তাদেরই একজন। জেলা সদর ভোলার ওয়েস্টার্ন পাড়ার রিজার্ভ পুকুর পাড় এলাকার বাসিন্দা মো. রাজিব মিয়ার দুই ছেলের মধ্যে রাহিম ইসলাম ভোলা সরকারি কলেজের (রাষ্ট্র বিজ্ঞান) অনার্স চতুর্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র। ২৫ বছর বয়সী টগবগে এ যুবকের চোখ ছিল অগ্নিগর্ভ। মুখে ছিলো কোটা আন্দোলনের শ্লোগান আর মনে ছিল অদম্য অসীম সাহস। আর সেই সাহসের ঝাণ্ডা হাতে নিয়েই ভোলার রাজপথ কাঁপিয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্ত বাংলাদেশে সকলকে স্বস্তির নি:শ্বাস এনে দিয়েছেন। মুখে হাসি আর হৃদয়ে সরলতা লালন করলেও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এ ছেলেটি যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ভোলার মানুষ তা দেখতে পেয়েছেন। 

জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিগাথা সেই দিনগুলোর নানা দিক নিয়ে বাসসের সাথে কথা বলেন, রাহিম ইসলাম। তিনি বলেন, দেশ ও মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে অন্য ভাইদের মতো আমিও নেমে পড়েছিলাম নতুন বাংলা বিজয়ের আশায়। তিনি বলেন, ব-দ্বীপ ছাত্র কল্যাণ সংসদ নামে তাদের একটি সামাজিক সংগঠন রয়েছে। দিনটি ছিলো ২০২৪ সালের ১২ জুলাই। যখন ঢাকার রাজপথ কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল। পুলিশের বুলেটের সামনে জীবন দিচ্ছেন, ছাত্র-জনতা। মারছে গুলি, মরছে মানুষ, চলছিল গোলাবারুদের খেলা। তবুও আন্দোলন চলছেই। এমন দৃশ্যপটে ক্লাশের সহপাঠীদের নিয়ে আমিও প্রস্তুতি নেই রাজপথে নামার।

প্রথমে আন্দোলনটি ছিল ব-দ্বীপ ছাত্র কল্যাণ সংসদের ব্যানারে। পরে কলেজের জুনিয়র-ভাই বোনেরাও আন্দোলনে রাজপথে নামতে আমাদের সাথে একীভূত হন। তখন আন্দোলনের ব্যানার হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে। তিনি জানান, আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া থেকে সরে যেতে তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থা তাকে বারবার নির্দেশ দেয়। তাদের কথা না শুনায় ১৭ জুলাই গভীর রাতে রাহিমকে আটক করে পুলিশ। নির্যাতন চালানো হয় ব্যাপক। পরবতীতে বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ'র হস্তক্ষেপে রাহীম মুক্ত হন। 

ছাত্রলীগের হামলা 

রাহিম ইসলাম বলেন, ১২ জুলাই আমরা যখন ভোলা সরকারি কলেজের সকল ছাত্র ছাত্রীগণ রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হিমেল ও সম্পাদক রায়হানের নেতৃত্বে দূর্বৃত্তরা কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে বহু শিক্ষার্থীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হুমকি দেয়, হাসিনা বিরোধী আন্দোলন করলে মেরে ফেলা হবে। ওইসময় হামলার শিকার হয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাহিমের নেতৃত্বে রাজপথে সংগঠিত হতে থাকে। ওইদিন কলেজ ক্যাম্পাসে আন্দোলনের ভেণ্যু পরিবর্তন করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বেলা তিনটার দিকে ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরে এসে মিলিত হন। সেখানেও ছাত্রলীগের হিমেল-রায়হান বাহিনী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালালে বেশ কয়েকজন আহত হন। এভাবে ১২ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত বিরামহীন আন্দোলন চলতে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য 

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাহিম ইসলামের সাথে থাকা তার সহকর্মী আলভী, এ্যানী, জাবের, সৌরভ, ইব্রাহীম, দিহান, শ্রীকান্ত ও শামীম আহমেদ ছিলেন। তাদের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা সকলেই একবাক্যে তাদের দলীয় নেতা রাহিম ইসলামের নেতৃত্ব আর সাহসীকতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, রাহিম সেদিন জীবনের মায়া ত্যাগ করে অধিকার আদায়ের মিছিলে নেমে পড়েছিল, সেদিন আমরাও আর ঘরে বসে থাকতে পারিনি। রাহিমের ইচ্ছে, মনোবল আর সাহসীকতার কাছে আমরা যেনো হেরে গিয়েছিলাম। তাই রাহীমের নেতৃত্বকে আমরা স্যালুট জানিয়ে জুলাই বিপ্লবের সারথী হয়েছি। বিজয় নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পেরেছি।

ফ্যাসিস্টের হামলার শিকার 

আন্দোলনকারীদের সাথে কথা হলে তারা জানাম, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিপ্লবকালে ভোলার রাজেথে আ'লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ আর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ক্যাডাররা প্রতিনিয়ত কাটা রাইফেল, শর্টগান, পিস্তল, লাঠি আর ধাড়ালো অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালাতো। সেই হামলায় বিশেষ করে ২৬ জুলাই থেকে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত কমপক্ষে শতাধিক ছাত্র জনতা আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ভোলা সরকারি কলেজের ছাত্র-ইয়ামিন হাওলাদার, সাখাওয়াত, সাকিল, কবির, ইসরাফিল ও সাকিব উল্লেখযোগ্য। 

রাহিম ইসলাম জানান, তারা গুরুতর আহত ২৮ জনের নামের তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়েছেন। 

সুপারী বাগানে পরিকল্পনা  

দেশের পরিস্থিতি যখন খারাপের দিকে যাচ্ছিলো, ফ্যাসিষ্টের গুন্ডাবাহিনী যখন মানুষের রক্ত খাচ্ছিল, তখন ভোলার রাজপথেও হায়েনার দল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার উপর আক্রমন শুরু করে। রাহিম ইসলাম জানান, এমতাবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আমরা ভোলা শহরতলীর পরাণগঞ্জ এলাকার সুপারী বাগানে সংগঠিত হতে থাকি। অস্ত্রধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বুলেটের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র মানুষ কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এমন ছক তৈরি করি। তখন মুক্তিকামী ছাত্রদেরকে খাবার ও পানি সরবরাহের মাধ্যমে এলাকাবাসী আমাদের আরো বেশি সাহস যুগিয়েছিলেন। আমরা তাদের সেই ঋণ কখনই শোধ করতে পারবো না। এভাবে সংগঠিত হয়ে ছাত্র জনতা সম্মিলিতভাবে আমরা ভোলা শহরের ইলিশা বাসস্ট্যান্ডের ইলিশ ফোয়ারা চত্বরে এসে সমবেত হই। আমাদের দু:সাহসিক অভিযাত্রার সারিতে সাধারণ মানুষ আসতে থাকায় অল্প সময়ের মধ্যেই ওই এলাকা জনসমূদ্রে রূপ নেয়। বিপ্লবী জনতার প্রতিরোধের মুখে আক্রমন করতে সাহস করেনি আ'লীগ ক্যাডাররা। এভাবে প্রতিদিন আন্দোলনের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। কালক্রমে কোটা বিরোধী আন্দোলন সরকার পতনের একদফায় রুপ নেয় ৫ আগষ্ট। তখন ভোলার জনপদও মুক্ত হয়। হাসিনা পালানোর খবর আসলে অন্য জেলার মতো ভোলার মুক্তিকামী মানুষও আনন্দ মিছিল নিয়ে বাঁধভাঙ্গা উল্লাশে ফেটে পড়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
৪৮তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি 
নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন ভোলার মাসুমা
গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় চারজন রিমান্ডে
স্বাস্থ্যখাতের টেকসই সংস্কারে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বদ্ধপরিকর : প্রধান উপদেষ্টা
আমার শহরে জুলাই অভ্যুত্থান / নরসিংদীতে আন্দোলন দমাতে গণগ্রেফতার অব্যাহত ছিল 
সারা দেশে প্রাইমারি স্কুলের স্থগিত অনুষ্ঠান হবে ৩১ জুলাই
একনেক সভায় ৮ হাজার ১৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ১২ প্রকল্প অনুমোদন
শেখ মুজিব একদলীয় শাসন চালিয়েছে আর শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে : মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন 
করোনায় আরও ১ জন আক্রান্ত
জুলাইয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে জিইডি 
১০