ঢাকা, ২২ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করছে দলটি।
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসিরুদ্দিনের কাছে জমা দিয়েছেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খানের (মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক) নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতনিধি দল।
আবেদনের কপি নিয়ে বিএনপির প্রতিনিধিদল প্রথমে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এরপর তারা শেরেবাংলা থানায় মামলার আবেদন করবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত এই তিন নির্বাচনকে ঘিরে বারবার অভিযোগ করার পরেও তৎকালীন সিইসি ও সংশ্লিষ্টরা কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা আশা করি বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। আমরা বিএনপির মহাসচিবের এ সংক্রান্ত চিঠি জমা দিয়েছি।'
তিনি জানান, যেহেতু নির্বাচন ভবন আগারগাঁও এলাকায়, সেজন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হবে। এজাহারে আমরা ১৯ জনের নাম উল্লেখ করেছি। অজ্ঞাত আরো আসামী আছে, তদন্ত কর্মকর্তা তাদের খুঁজে বের করবেন।
বিএনপির আবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের অবৈধ নির্বাচনে মিথ্যা ও প্রতারণা করে সংসদ সদস্য প্রার্থীদের বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ায় আমাদের দলের প্রার্থীরা জেলায় জেলায় নির্বাচন অফিসে ও উপজেলা নির্বাচন অফিসে নির্বাচন বানচাল ঘোষণার লিখিত আবেদন করে। এরপরও কোন প্রকার কার্যকরী ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা ও তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে আবেদনে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে যান। সেই সংসদকে ‘বিনা ভোটের সংসদ’ আখ্যা দিয়ে ভোট বর্জন করে বিএনপি। কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন এ কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু হাফিজ, সাবেক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাবেদ আলী এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ মো. শাহনেওয়াজ।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে। অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়। সে নির্বাচনের নাম হয় ‘নীশিরাতের নির্বাচন’। কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন এ কমিশনের সদস্য ছিলেন সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ জোটের শরিক দলগুলো। এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে জাতীয় পার্টিসহ অন্য শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় মূলত ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহীদের। এ নির্বাচনকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতারা ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন বলে অবহিত করে। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন এ কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান।