শিরোনাম
ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আগামীকাল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানিয়ে বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমি দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ’৭১-এর ঘাতক, মানবতা বিরোধী-যুদ্ধাপরাধী জামাত-মৌলবাদীচক্র এবং দেশ ও গণতন্ত্র বিরোধী অপশক্তির যে কোন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে। এই জঘন্য হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে তারা হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃত করে। সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিয়ে দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মুক্তমনা, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ, সংখ্যালঘুদের হত্যা করে এবং ধর্ষণ ও নির্যাতন চালায়।
তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী-জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে দেশব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, মানুষ পুড়িয়ে মারে এবং পরিকল্পিত নাশকতা চালায়। এখনও তারা একইভাবে নাশকতা, আগুনসন্ত্রাস, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৪ বছরের পাকিস্তানি বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে দেশের আপামর জনসাধারণকে সংগঠিত করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিকামী বীর বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় পাকিস্তানের দোসর জামাতসহ ধর্মান্ধ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তারা রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করে পাক হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করার পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে তারা দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ দেশের মেধাবী সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা ও গুম করে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, শহীদুল¬াহ কায়সার, গিয়াসউদ্দিন, ডা. ফজলে রাব্বি, আবদুল আলীম চৌধুরী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতাসহ আরো অনেকে। স্বাধীনতা বিরোধীরা এই পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের জঘন্যতম প্রতিশোধ নেয়। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করাই ছিলো এ হত্যাযজ্ঞের মূল উদ্দেশ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছে। বিচার চলমান রয়েছে এবং অনেকগুলো বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। এসব রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পেয়েছে। দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। এই কুখ্যাত মানবতা বিরোধীদের যারা লালন-পালন ও রক্ষার চেষ্টা করছে, তাদেরও একদিন বিচার হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ বাঙালি জাতি চিরদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।