বাসস
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:১০
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:১৩

অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিনে বই এসেছে ৭৪ টি

ঢাকা, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ (বাসস): অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিনে মেলায় ২০টি উপন্যাস, ২১টি কবিতা, ৩টি জীবনী, ৪টি ভ্রমণকাহিনি, ২টি ইতিহাস, ৫টি অনুবাদ, ১টি মুক্তিযুদ্ধ বিষযকসহ ৭৪টি মোট বই এসেছে।
আজ শনিবার বইমেলায় ছিল শিশুপ্রহর। এসময় নানা বয়সী শিশুদের কলতানে মুখরিত ছিল মেলাপ্রাঙ্গণ।
বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিশতজন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : মাইকেল মধুসূদন দত্ত শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকউল্লাহ খান। অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা’র সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খসরু পারভেজ ও হোসনে আরা। 
প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন-বিচার কেবল মননশীল সাহিত্য-সমালোচনার বিষয় নয়, সমগ্র ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্যক্তিসত্তা, সমাজসত্তা ও সৃষ্টিশীলতার জাগরণ এবং সাহিত্যের প্রায় সবগুলো রূপের উন্মেষ ও প্রতিষ্ঠার বহুমুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সাফল্যের ইতিবৃত্ত। নাটক, আখ্যান-কাব্য, গীতিকবিতা, চতুর্দশপদী, পত্র-কাব্য, গ্রিক মহাকাব্যের গদ্যানুবাদ, ইংরেজি রচনা ও চিঠিপত্র মিলিয়ে তাঁর সৃষ্ঠিশীল প্রতিভার প্রকাশরূপ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়িত হয়েছে। তার কিংবদন্তিতুল্য জীবন ও কর্মের সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত রূপ অঙ্কনের প্রয়াস আজও চলমান।   
আলোচকবৃন্দ বলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন তার যুগের থেকেও অগ্রসর একজন ব্যক্তিত্ব। বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে তিনি এনেছিলেন আধুনিকতার যুগ। রামায়ণের কাহিনিকে অবলম্বন করে রাবণকে নতুনভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। চিরায়ত সাহিত্যের প্রতি তার বিশেষ অনুরাগ থাকলেও তার সাহিত্যে চিরায়ত ও রোমান্টিকতার সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়। মধুসূদনের ব্যক্তিজীবন ও সাহিত্যজীবনের পাশাপাশি তার সাহিত্যকর্ম নিয়েও গভীরভাবে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। 
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক সালেহা চৌধুরী, লালন গবেষক আবু ইসহাক হোসেন এবং কবি ও প্রাবন্ধিক মামুন মুস্তাফা।  
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি নাসির আহমেদ, তারিক সুজাত, শাহনাজ মুন্নী ও নাহার মনিকা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মিলন কান্তি দে, শাহাদাৎ হোসেন নিপু ও আফরোজা কণা। এছাড়া ছিল ঝর্ণা আলমগীরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং লক্ষ্মীকান্ত হাওলাদারের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শেখ রাসেল ললিতকলা একাডেমি’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, লাইসা আহমেদ লিসা, অনুরাধা ম-ল, মুহা: আব্দুর রশীদ, সঞ্চিতা রাখি ও পাপড়ি বড়–য়া। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার  (তবলা), দেবা পাল (কী-বোর্ড), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) এবং অসিত বিশ্বাস (এসরাজ)।  
এছাড়া অমর একুশে বইমেলায় বিশেষ আকর্ষণ বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির স্টলে  (বাংলা একাডেমির মূল চত্বরে) পাওয়া যাচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির বর্তমান সভাপতি ড. হারুন অর রশিদ সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জ্ঞানকোষ (এনসাইক্লোপিডিয়া)। ‘মোট ১০ খন্ডের এক সেট বই কেনা যাবে হ্রাসকৃত মূল্য ৫ হাজার টাকায়। দশ খন্ডের পূর্ব মূল্য ছিল ১২ হাজার টাকা। 
এবারের অমর একুশে বইমেলায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিক কানাই চক্রবর্তী রচিত ‘ইতিহাসে নেই’ উপন্যাসটি পাওয়া যাচ্ছে অনুপম প্রকাশনীতে। 
উপন্যাসটি লেখার নেপথ্য ইতিহাস থেকে জানা যায়, ‘ইতিহাসে নেই’ মূলত ইতিহাসনির্ভর একটি উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী অবলম্বনে লেখা একটি জনপদের গল্প’। তবে ইতিহাস নয়। এই উপন্যাসের কয়েকটি চরিত্র এখনো জীবিত। অনেকেই মৃত। উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ইতিহাসের সাথে যোগ হয়েছে অতীত ঐৗতিহ্য এবং বীর নায়কদের শৌর্যবীর্য। সেই দৃষ্টিতে এ গ্রন্থটি লেখকের নিজস্ব বয়ানে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্টদের কথা বলে এবং বিভিন্ন বই এবং ইতিহাস ভিত্তিক গ্রন্থের সহযোগিতা নিয়ে একটি উপন্যাস রচনার প্রয়াস। বিষয়বস্তু একটি আঞ্চলিক জনপদের হলেও উপন্যাসটি জাতীয় পর্যায়ে আবেগানুভূতি নিসৃত। একাত্তরে দেশের প্রায় সব জনপদেরই গল্প এটি।
আগামীকাল ৪ ফেব্রুয়ারি রোববার অমর একুশে বইমেলার ৪র্থ দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩ টায়, চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত।
বইমেলার নির্ধারিত অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ’স্মরণ : কাঙাল হরিনাথ মজুমদার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তপন মজুমদার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাফর ওয়াজেদ এবং আমিনুর রহমান সুলতান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মুনতাসীর মামুন।