বাসস
  ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:১১
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৩৪

গাজীপুরে হচ্ছে দেশের প্রথম ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট

// আলহাজ শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ //
গাজীপুর, ৬ এপ্রিল, ২০২৪ (বাসস): বাংলাদেশে এই প্রথম ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট নির্মাণ হচ্ছে গাজীপুরে। সেলফোন-ল্যাপটপ ও রেফ্রিজারেটর-এয়ার কন্ডিশনারের মতো বিলাসপণ্য এখন নিত্য প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বেড়েছে ব্যবহার-উত্তর বর্জ্যের পরিমাণ। ব্যক্তিগতভাবে অনেক ব্যবসায়ী এসব ইলেকট্রনিকস ই-বর্জ্য রিসাইকেলিং করেন। তবে সেখানে রয়েছে নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি। এসব দিক বিবেচনায় রেখেই এই প্রথম ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট নির্মাণ হচ্ছে ।
পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (বেস্ট) নামে একটি প্রকল্পের কাজ চলমান। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের চতুর্থ কম্পোনেন্টের অধীনে নির্মাণ হবে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট। এজন্য প্রাথমিকভাবে ব্যয় হবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্কে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্কের উপ-পরিচালক মো. মাহফুজুল কবির বলেন, ‘দ্রুত উদীয়মান অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে-সাথে বেড়েছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও। শহর-গ্রাম সর্বত্র ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে ইলেকট্রনিক বর্জ্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ২০৩০ সালে ই-বর্জ্যের বার্ষিক পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৬ লাখ টন। দেশে এখনো ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পূর্ণাঙ্গ রিসাইকেলিং সিস্টেম গড়ে ওঠেনি।
তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। আমরা ই-বর্জ্য প্লান্ট নির্মাণে প্রাথমিক কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই হবে। এরপর অবকাঠামোগত কাজ শুরু হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ভূমি উন্নয়ন, ৩৫ ফুট উচ্চতার একটি স্টিল শেড নির্মাণ এবং ইলেকট্রো মেকানিক্যাল ওয়ার্কস্টেশন নির্মাণ হবে। এছাড়া সীমানাপ্রাচীর, ভবন, যানবাহন শেড, আরসিসি সড়ক, ড্রেনেজ সুবিধা, ল্যান্ডস্কেপিং ও আবাসন সুবিধা, পরামর্শ সেবা, সরঞ্জাম ও আসবাব সংগ্রহ করা হবে। প্রতি বছর লাখ লাখ সেলফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, এয়ারকন্ডিশনার, ফটোকপি মেশিনসহ ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম অকেজো হয়ে যায়। এসব ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের পরিবেশসম্মত ও আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা নেই। সেগুলোর গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়। সঠিকভাবে ই-বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবেশসম্মত উপায়ে রি-সাইকেল করতে পারলে তা সম্পদে রূপান্তর সম্ভব হবে।
এ প্রসঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. মো. সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, ই-বর্জ্য সংগ্রহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কী উপায়ে এটা সংগ্রহ হবে, তার সঠিক রূপরেখা প্রণয়ন জরুরি। এক্ষেত্রে যারা ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদন করে কিংবা যারা আমদানি করে, তারাই বড় সোর্স। তাদের থেকে সঠিক উপায়ে ই-বর্জ্য সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া বাসাবাড়ি, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে যে বর্জ্য তৈরি হবে, সেটাও পরিকল্পিত উপায়ে সোর্স থেকেই আলাদা করে সংগ্রহ করা জরুরি। এরপর বর্জ্য যখন প্লান্টে চলে আসবে, সেটা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পরিবেশের ক্ষতি না করে রি-সাইকেল করতে হবে। যদি এ দু’টি মৌলিক বিষয়ে ঘাটতি থাকে, তাহলে ই-বর্জ্য নিয়ে আমাদের যত বড় উদ্যোগই নেয়া হোক, তা সফল হবে না।