বাসস
  ৩১ মে ২০২৪, ১২:৩৭

গোপালগঞ্জে বিনাতিল-২ এর বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) ৩১ মে, ২০২৪ (বাসস): স্থানীয় জাতের তিলগাছের গোড়ায় পানি জমলে গাছ মরে যায়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে অতিবৃষ্টিতে গোপালগঞ্জের তিলক্ষেতে পানি জমে যায়। অনেক তিলগাছ বাতাসে ক্ষেতে পড়েছে, কিন্ত  বিনাতিল-২ এখনো ক্ষেতে দাঁড়িয়ে আছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের পরও বিনাতিল-২ ভাল ফল দেবে বলে কৃষকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত ঔষধি গুন সম্পান্ন বিনাতিল-২ চাষ করে কৃষক প্রতি হেক্টরে ১ হাজার ৭০০ কেজি ফলন পাবেন।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রের কর্মকর্তারও এমন প্রত্যাশা করছেন। বপনের ৯০ দিনের মাথায় কৃষক ক্ষেত থেকে তিল ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারেন। তিল চাষ করে কৃষক পাটের তুলনায়  দ্বিগুন টাকা আয় করতে পারেন। ঔষধি গুন সম্পান্ন এ তিলের তেল হৃদরোগ, চর্মরোগ প্রতিরোধী ও চুলের যতেœ অতুলনীয়। এ জাতের তিলে ৪৫% তেল পাওয়া যায়। এ তিলের চাষ বৃদ্ধি করে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব। মাঠে প্রতিকূল আবহাওয়া সহিষ্ণু তিলের সমারোহ দেখে  এ তিল চাষে  কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম আকন্দ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলার ৩৫ বিঘা জমিতে বিনাতিল-২ এর ৩৫টি প্রদর্শনী প্লট করেন ৩৫ জন কৃষক। বিনা উপকেন্দ্র থেকে কৃষককে বিনামূল্যে বীজ, সার, ছাত্রাকনাশক প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বিনা উপ-কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ও বৈজ্ঞানিক সহকারীরা জেলার কৃষককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। এ তিল তিনদিন পানির মধ্যে বোঁচে থাকতে পারে। লবণ সহিষ্ণু এ জাতটি প্রতিকূল পরিবেশেও ভাল ফলন দিতে সক্ষম। এ কারণে এত দীর্ঘস্থায়ী ঝড়ের পরও বিনাতিল-২ মাঠে ভাল দেখা যাচ্ছে। এ তিল হেক্টরে ১ দশমিক ৭ টন ফলন দেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ধলগ্রামের কৃষক সাজ্জাদুল হক রানা  বলেন, এই বছর বিনা উপকেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার, ছত্রাকনাশক পেয়ে ৫২ শতাংশ জমিতে প্রথম বিনাতিল-২ চাষ করেছি। এ জন্য বিনা উপ-কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা মাঠে এসে পরামর্শ দিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। তিলগাছের গোড়ায় পানি জমেছে। স্থানীয় জাতের তিলগাছ মারা গেছে। কিন্তু বিনাতিল-২ এখনো ক্ষেতে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষেতে তিলের ফলন দেখে মনে হচ্ছে সাড়ে ৭ মন ফলন পাব। এ তিল ২৮ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব। ৫২ শতাংশে তিল আবাদে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। খরচ বাদে লাভ হবে ২৩ হাজার টাকা। এ জমিতে গত বছর পাট চাষ করে মাত্র ১১ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম। পাটের তুলনায় তিল চাষে দ্বিগুন লাভ হবে। বিনাতিল-২  জাতটি প্রতিকূল আবহাওয়া সহিষ্ণু। এটি চাষাবাদ করে প্রমান পেয়েছি। আগামী ৮/১০ দিনের মধ্যে ক্ষেতের তিল কাটা পরবে।
একই গ্রামর কৃষক মো. মনিরুল মোল্লা বলেন, এ তিল ৯০ দিনে ক্ষেত থেকে কাটা যাবে। তারপর আমন চাষ করব। রবি মৌসুমে এ জমিতে সরিষা বা মসুর আবাদ করব। স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন বিনাতিল-২ আবাদ করায় একই জমিতে বছরে তিনটি ফসল করতে পারছি। পাশাপাশি তিল চাষ করে পাটের তুলনায় দ্বিগুন লাভ হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ বিনা উপ-কেন্দ্রের ইনচার্জ ও উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুজ্জামান বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করছে। পাট চাষের সময় বৃষ্টিপাত হয় না। তাই কৃষক পাটের পরিবর্তে বিনাতিল-২ চাষ করতে পারেন। এতে লাভ বেশি। এছাড়া জাতটি প্রতিকূল আবহাওয়া সহিষ্ণু। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে  ভাল ফলন দিতে সক্ষম। লবণ সহিষ্ণু জাতটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য জাতটি উপযোগী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইসানুর রহমান বলেন, ঔষধি গুন সম্পান্ন এ তিলের তেল হৃদরোগ, চর্মরোগ প্রতিরোধী ও চুলের যতেœ অতুলনীয়। এ জাতের তিলে ৪৫% তেল পাওয়া যায়। ফলন দেয় ভাল। তাই লাভজনক  এ তিলের চাষ  সম্প্রসারণে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করব।
বিনার মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের প্রতিবছর ২২ হাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। তাই সরকার ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে আমরা তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধিতে  কাজ করছি। গেল রবি সৌমুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সরিষা উৎপাদিত হয়েছে। তিল একটি অন্যতম তেল জাতীয় ফসল। বিনাতিল-২ জাতে ৪৫% তেল পাওয়া যায়। এটির চাষাবাদ সম্প্রসারণ করতে পারলে দেশে তেলের আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব। এতে কৃষকের আয় বৃদ্ধি পাবে। আবার বৈদেশিক মূদ্রাও সাশ্রয় করা যাবে।