বাসস
  ০৪ জুন ২০২৪, ১১:১৯

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করছে বীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ৪ জুন,২০২৪ (বাসস): গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এ প্রকল্প শুরু হয়। চলতি মাসে প্রকল্পটি সমাপ্ত হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর এ উপজেলায় ৮ জন কৃষক ৫ টন করে ৪০ টন বোরো ধান বীজ, ৪ জন কৃষক ৪ টন করে ১৬ টন আউশ ধান বীজ , ৬ জন কৃষক ৪ টন করে ২৪ টন আমন ধান বীজ ও  ৬ জন কৃষক ৪ টন করে ২৪ টন গম বীজ উৎপাদন করেছেন । তারা এসব বীজ নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করেছে।  চাষ মৌসুমে স্বল্পমূল্যে মানসম্মত এসব বীজ কৃষকের কাছে তারা  বিক্রি করছেন । কৃষক এসব বীজ  দিয়ে উচ্চ ফলনশীল ধান ও গমের  চাষাবাদ সম্প্রসারণ করছেন । ফলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ধান ও গমের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশি ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এতে কৃষকের আর্থসামাজিক  অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সঠিক সময়ে সঠিক মূল্যে সঠিক জাতের উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ সহজলভ্য করে ফসলের উৎপাদনা বৃদ্ধি করা। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মানসম্মত ধান, গম ও পাট বীজ চাষি পর্যায়ে উৎপাদন ও বিপণনের  মাধ্যমে কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা। কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার করে দ্রুত চাষি পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক লাগসই নতুন জাত সম্প্রসারণ করা। মানসম্মত বীজ উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে ইউনিয়নের বীজের চাহিদা পূরণ করা। উন্নতমানের বীজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গ্রামীণ দারিদ্র নারীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা। এছাড়া ক্ষুদ্র বীজ শিল্প স্থাপন এ প্রকল্পের মূখ্য উদ্দেশ্য।  
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রদর্শনী, মাঠ দিবস, উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ, কৃষকদল প্রশিক্ষণ, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ,কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ, মনিটরিং সেবা জোরদারকরনসহ অন্যান্য  কর্মকান্ডের মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।  এ প্রকল্পের আওতায় বীজ উৎপাদনকারী কৃষককে বীজ, সার, বালাইনাশক, বীজ শুকানো ও সংরক্ষণ পাত্র, ময়েশ্চার মিটার, চালনি, মোড়কীকরণের যন্ত্রপাতি ইত্যাদি প্রদান করা হয়। বীজ উৎপাদনে কৃষাণীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তারাও বীজ উৎপাদন করেছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের বোরো বীজ উৎপাদনকারী কৃষক মফিজুর রহমান, মানিকদাহ গ্রামের আহাদ মিয়া বলেন, প্রকল্পের সহায়তায় ৫ বছর ধরে  বীজ উৎপাদন  করিছ। এখন এটি পুরোপুরি আয়ত্ত করেছি। আমাদের এলাকায় আমরাই অধিকাংশ কৃষকের কাছে মানসম্মত উচ্চ ফলনশীল ধান বীজ স্পল্পমূল্যে বিক্রি করছি। ধান বীজ বিক্রি করে আমরা ভালো মুনাফা পাচ্ছি । পাশাপাশি আমাদের কাছ থেকে এসব বীজ কিনে নিয়ে কৃষক ক্ষেতে আবাদ করে অধিক ফলন পাচ্ছেন। প্রকল্প শেষ হলেও  আমরা  ক্ষুদ্র বীজ শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে এ কাজ  চালিয়ে যাব। এখানে নারীসহ অনেকেরই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বীজ উৎপাদন করে আমাদেরও আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।  
গম বীজ উৎপাদনকারী   গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের এনামূল শেখ বলেন,  আগে শুধু গম উৎপাদন করতাম লাভের আশায়। তখন উৎপাদিত গম বাজারে বিক্রি করে সামাস্য মুনাফা হত। পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পারামর্শে গম বীজ উৎপাদন শুরু করি। উচ্চ ফলনশীল মানসম্মত গম বীজ   কৃষকদের কাছে বিক্রি করে আয় বৃদ্ধি করতে পেরেছি। প্রকল্প শেষ হলেও আমি এ কাজ চালিয়ে যাব।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সুকতাইল গ্রামের কৃষক আলী মিয়া শেখ বলেন, চাষাবাদের সময় বীজ পাওয়া যেত না। চাষাবাদে অনেক বছর দেরী হত। মান সম্মত বীজ পেতাম না। তাই  ফসল উৎপাদন কমে যেত। এখন বাড়ির পাশেই মানসম্মত বোরা, আউশ, আমন  ধান ও গমের বীজ কমমূল্যে পাই। এ বীজ দিয়েই সময়মতো  চাষাবাদ
করতে পারি। এতে ফলন ভালো হয়। বেশি ফসল পেয়ে আমি খুশি। এতে আমার আয় বেড়েছে ।