বাসস
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:১০

বন্যায় কুমিল্লার গ্রামীণ ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারে স্থানীয় তরুণ-যুবকেরা

॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রেও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভাঙনের কবলে অনেক সড়কে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ অবস্থায় স্বেচ্ছাশ্রমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার করেছেন একদল তরুণ-যুবক। তাদের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছেন প্রবাসীরা।
আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।
বন্যার পানি বেড়ে গোমতী, ঘুংঘুর ও সালদা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় কুমিল্লার বেশ কয়েকটি উপজেলা। বন্যায় তীব্র পানির স্রোতে প্রায় ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে বলে এলজিইডি ও সড়ক জনপথ বিভাগ বাসসকে জানিয়েছে। এর বাইরে গ্রামীণ জনপদের কাঁচা সড়ক ও রাস্তাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ইতিমধ্যে দলবেঁধে স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করেছেন স্থানীয় তরুণ-যুবকেরা। ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রেও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।


স্থানীয়রা জানান, স্বেচ্ছাশ্রমে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এসব সড়ক সংস্কারের কাজে এগিয়ে এসেছেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল, নাগাইশ, চান্দলা, বড়ধুশিয়া ও দুলালপুরের একদল তরুণ ও যুবসমাজ। তারা গত এক সপ্তাহ ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কে ইট-বালি, বাঁশের বেড়ি, বস্তা দিয়ে সংস্কার কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে ওই সড়কে নতুন করে ইতিমধ্যে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে, এতে খুশি সড়কে চলাচলরত লোকজন।
নাগাইশ গ্রামের বাসিন্দা স্বেচ্ছাসেবী গাজী রুবেল বাসসকে বলেন, বন্যায় পিচঢালা রাস্তা ভেঙে নাজেহাল হয়ে যায়। গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তা মেরামত করে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। বড়ধুশিয়া শশীদল সড়কটির ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো সংস্কার করা হলে ১২টি গ্রামের সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগ সচল হবে। স্বেচ্ছাসেবী মাওলানা মোজ্জামেল হক বাসসকে বলেন, গ্রামের প্রবাসী, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতায় বন্যার শুরু থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণ কার্যক্রমে পরিচালনা করেন। আগামী দিনগুলোতে সড়ক সংস্কার ও পুর্নবাসনে কাজ করে যাবেন বলে জানান- স্বেচ্ছাসেবীরা সদস্যরা। বন্যায় ভেঙে পড়া পাঁচ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করে যাতায়াত ব্যবস্থা সচল করছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী তরুণ-যুবকেরা।  
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি মেডিকেল অফিসার সোহেল রানা বলেন, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলেও এসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল দূরের কথা, হেঁটেও চলাচল করা সম্ভব ছিল না। এ জন্য উদ্যোগ নিয়ে এলাকার তরুণ ও যুবসমাজ স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা মেরামত করছে। মাহফুজ হোসেন বলেন, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলেও এসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল দূরের কথা, হেঁটেও চলাচল করা সম্ভব ছিল না। এজন্য উদ্যোগ নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা মেরামত করা হয়েছে।
এদিকে জেলার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কয়েকটি সড়কটি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় ইট, বালু দিয়ে রাস্তা মেরামত করছে স্থানীয়রা। আলকরা সড়কে পদুয়া সুফিয়া রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, পদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পদুয়া নুরানী মাদ্রাসা ও পদুয়া কিন্ডারগার্টেন অবস্থিত। এতে পদুয়া, দামারপাড়া, আশফালিয়া ও দক্ষিণ ডেকরা গ্রামের মানুষের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই স্থানীয় যুবকরা গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে প্রবাসীদের অর্থে প্রায় ৬০০ মিটার সড়কটিতে ইটের রাবিশ ফেলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করা হয়েছে। দামারপাড়ার গ্রামের বাহার মিয়া বলেন, বন্যায় সড়কটি ভিশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রবাসীদের উদ্যোগে এ সড়কে রাবিশ দিয়ে দেত্তয়ায় চলাচলের উপযোগী হওয়ায় এখন আমরা চলাফেরা করতে পারছি।
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বাসসকে বলেন, গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙা রাস্তা মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করছে। উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সব সড়ক দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার স ম আজহারুল ইসলাম বাসসকে বলেন, এ দিকে দেশের প্রতিটি সমস্যা চিহ্নিত করে এভাবে যুব সমাজকে এগিয়ে এসে হাল ধরলে, সুন্দর একটি বাংলাদেশ তৈরি হবে এমটাই প্রত্যাশা করেন সকলে। আমি ইতিমধ্যে ব্রাক্ষণপাড়ার সড়কটি পরিদর্শন করেছি। বন্যার পরবর্তী সময় এলাকাবাসী এগিয়ে এসে স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কের বিচ্ছিন্ন অংশগুলো মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করে তোলছেন।