শিরোনাম
ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন
নাটোর, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : চলতি শীত মৌসুমে জেলায় অন্তত ১০৮ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন হবে। রস আহরণযোগ্য তিন লাখ ২১ হাজার ১৩৫টি খেজুর গাছ থেকে এ গুড় পাওয়া যাবে। জেলার আট হাজার ব্যক্তি খেজুর গুড় আহরণ ও গুড় তৈরীর কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নাটোর জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট খেজুর গাছ রয়েছে চার লাখ ১৮ হাজার ৮৮০টি। এরমধ্যে রস সংগ্রহের উপযোগী গাছের সংখ্যা তিন লাখ ২১ হাজার ১৩৫টি। শীত মৌসুমের ৭৫ দিনে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ২০৭ লিটার রস পাওয়া যায়। আর প্রতিটি গাছের রসে গুড় উৎপাদন হয় ২২ কেজি।
জেলায় চলতি মৌসুমে গড়ে প্রায় ছয় হাজার ৭৯০ টন খেজুর গুড় উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে । উৎপাদিত গুড়ের আর্থিক মূল্য অন্তত ১০৮ কোটি টাকা।
জেলার সব উপজেলাতেই খেজুর গাছ থাকলেও লালপুর উপজেলায় তুলনামূলক খেজুর গাছের সংখ্যা ও গুড় উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। উপজেলার দশটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা অঞ্চলে সড়ক ও রেল লাইনের দুই পাশে, জমির আইল, বাড়ীর আঙ্গিনায় ছড়িয়ে আছে এক লাখ ১৩ হাজার ৬৩৫টি খেজুর গাছ। এসব গাছ থেকে গুড় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আড়াই টন। খেজুর গাছের রস সংগ্রহ কার্যক্রমে উপজেলার প্রায় তিন হাজার পরিবার নির্ভরশীল।
শীতকাল আসলেই অযত্ন ও অবহেলায় থাকা এসব খেজুর গাছের কদর বাড়ে। খেজুরের গাছ অন্য কোন ফসলের ক্ষতি করে না। এ গাছের জন্য বাড়তি কোন খরচ গুনতে হয় না। ঝোপ জঙ্গলে কোন প্রকার যত্ন ছাড়াই বেড়ে উঠে খেজুর গাছ। শুধু মাত্র শীত মৌসুম আসলে নিয়মিত পরিষ্কার করে রস সংগ্রহ করা হয়। জেলায় ৪০১ হেক্টর আবাদি জমিতে খেজুর গাছ ছড়িয়ে আছে।
প্রতিদিন একজন গাছি প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকেন। একজন গাছি শীত মৌসুমে ৭০ থেকে ৭৫ দিনে একটি খেজুর গাছ থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি গুড় পেয়ে থাকেন। এছাড়া খেজুরের পাতা দিয়ে মাদুর তৈরীসহ খেজুরের গাছ কেটে ঘরের তীর তৈরী করা হয়।
সিংড়া উপজেলার বড়সাঁঐল গ্রামের বেলাল হোসেন জানান, প্রতি বছর তিনি অন্তত ৭০ থেকে ৮০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বাড়িতেই গুড় তৈরী করে বাজারে বিক্রি করেন। কোন কোন সময় বাড়ি থেকেও গুড় বিক্রি হয়। আকরাম হোসেন জানান, প্রতি বছর প্রায় ১০০টির মত গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। এবার আরো ১২০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, এ মৌসুমে খেজুরের গুড় তৈরী ও বিক্রি করে তার সংসার ভালই চলে।
লালপুর এলাকার হযরত আলী এবং মিন্টু আলী জানান, এ এলাকার খেজুরের গুড় প্রসিদ্ধ। এখানকার গুড় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই বাজারজাত করা হয়। কোন কোন সময় দেশের বাহিরেও পাটালি গুড় পাঠানো হয়। তাদের দাবি, খেজুরের গুড়ের যেমন কদর আছে, সেই তুলনায় দাম আরো বেশি পাওয়া দরকার।
কারণ উৎপাদন খরচ বেশি, পরিশ্রমও বেশি হয়। তাই এ গুড় বিক্রির একটি সঠিক প্লাটফর্ম তৈরী করা দরকার। বাজার ব্যবস্থ’াপনা ও প্রক্রিয়াজাত করা গেলে এ গুড় শুধু দেশে নয়, বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এজন্য সরকারীভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, আমরা কৃষকদের খেজুরের গাছ লাগানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। উপজেলার অন্তত তিন হাজার ব্যক্তি খেজুরের রস ও গুড় তৈরী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল গুড় তৈরী করে সুনাম ক্ষুন্ন করছেন, তবে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে গাছিদের সম্পৃক্ততা নেই। ভেজাল গুড় উৎপাদকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে উপজেলার প্রসিদ্ধ গুড়কে সুরক্ষা দিতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করছি।
সিংড়া উপজেলা কৃষি অফিসার খন্দকার ফরিদ হাসান বলেন, খেজুরের রস দিয়ে সকালে মুড়ি খাওয়া, রস জ্বাল দিয়ে ভাপা পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। খেজুরের রস ও গুড় আমাদের ঐতিহ্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নাটোর জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, খেজুরের রস ও গুড় দু’টোই মানুষের কাছে খুব প্রিয় খাবার।
খেজুরের রস ও গুড়কে ঘিরে কর্মসংস্থা নের সুযোগ রয়েছে। প্রতিবছর জেলার দশ হাজার ব্যক্তি খেজুরের রস দিয়ে গুড় উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন । নিরাপদ গুড় উৎপাদন এবং বিপনন ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নে কৃষি বিভাগ নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে ।