ঢাকা, ১৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ইউরোপীয় নেতারা জানিয়েছেন, ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকে তারাও যোগ দেবেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা থামাতে সমাধান খুঁজতে সোমবার ওয়াশিংটনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বেলজিয়াম থেকে এএফপি জানায়, গত শুক্রবার আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তবে সেখানে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোন সমঝোতা হয়নি। তবুও হোয়াইট হাউসের দূত স্টিভ উইটকফ জানান, দুই নেতাই ইউক্রেনকে ‘শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এ খবরকে স্বাগত জানান। তবে ব্রাসেলসে তার সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি জানান, রাশিয়ার দেওয়া কোনো নিশ্চয়তা তিনি মানবেন না।
তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে যা বলেছেন, তা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পুতিন কোনো নিশ্চয়তা দেবেন না।’ পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি মার্কিন প্রস্তাবকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ওয়াশিংটন বৈঠকে ভন ডার লিয়েনসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে অংশ নেবেন।
তিনি বলেন, শান্তিচুক্তিতে ইউক্রেনের জন্য নিশ্চয়তার পরিমাপ কেমন হবে, তা নিয়ে ইউরোপীয় নেতারা প্রশ্ন তুলবেন।
মস্কোর অবস্থান প্রসঙ্গে ম্যাক্রোঁ জানান, রাশিয়াই একমাত্র দেশ যারা আত্মসমর্পণকে শান্তি নামে চালাতে চায়।
এদিকে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে একে ‘নিতান্তই মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দেন।
জাখারোভা আরও বলেন, মাখোঁ ইউক্রেনকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে তারা যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে, যদিও তিনি জানেন যে এটি ‘অসম্ভব’।
আলাস্কা বৈঠকের পর ট্রাম্প নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে বলেন, তিনি যুদ্ধবিরতি নয়, বরং শান্তিচুক্তি চান।
রোববার নিজের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে তিনি লেখেন, ‘রাশিয়া নিয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে। চোখ রাখুন!’
ট্রাম্পের হঠাৎ শান্তি চুক্তির দিকে মনোযোগ দেওয়া পুতিনের দীর্ঘদিনের কৌশলের সঙ্গে মিলে যায়। তবে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা এর সমালোচনা করে বলেছে, এটি মূলত সময় নষ্ট করা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার দখলদারিত্ব বাড়ানোর একটি কৌশল।
ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘পুতিন আমাদের সঙ্গে বসতে রাজি হওয়ার ব্যাপারে আমি কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না।’
সোমবার ওয়াশিংটনে জেলেনস্কির পাশে দাঁড়াতে যাওয়া নেতারা নিজেদের ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’ জোটের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। ভন ডার লিয়েন ও মাখোঁসহ তাদের মধ্যে রয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস এবং ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট।
এছাড়া ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবও ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে রোববার তারা সবাই এক ভিডিও কলে বৈঠক করেছেন, যাতে তাদের যৌথ অবস্থান ঠিক করা যায়।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে উইটকফ বলেন, ‘আশা করি সোমবারের বৈঠকটি ফলপ্রসূ হবে। আমরা একটি বাস্তবসম্মত ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব এবং রাশিয়ার সঙ্গে আবার আলোচনা করে শান্তিচুক্তিটি এগিয়ে নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারবো।’
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সতর্ক করে বলেন, শান্তিচুক্তি না হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আসবে।
ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের সম্পর্ক নিয়ে ইউরোপীয় নেতারা শুরু থেকেই অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। কারণ, পুতিন চাইছেন ইউক্রেন যেন অবশ্যই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে। এই ইউরোপীয় নেতাদের আবার আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিনের শীর্ষ বৈঠক থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল।
উইটকফ সিএনএনকে আরো জানান, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রক্রিয়াটি ‘গেম-চেঞ্জিং’ হতে পারে। তবে এতে কিছু অঞ্চলকে ছাড় দেওয়ার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আলাস্কা বৈঠক থেকে ফেরার পথে ট্রাম্প ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপে জানান, তিনি পুতিনের প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দুইটি অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার দখলে যাবে।
বিনিময়ে অন্য দুই অঞ্চলে সামরিক লড়াই স্থগিত থাকবে।
এক কর্মকর্তা জানান, পুতিন ‘কার্যত চাইছেন ইউক্রেন যেন দোনবাস ছেড়ে দেয়।’ দোনবাস হলো পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত একটি এলাকা। যা বর্তমানে রাশিয়া আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
এর বিনিময়ে, রুশ বাহিনী খেরসন ও জাপোরিঝিয়া প্রদেশের কৃষ্ণসাগর বন্দর এলাকায় তাদের আক্রমণ থামিয়ে দেবে, যেখানে প্রধান শহরগুলো এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ইউক্রেনে পুরোদমে আক্রমণের কয়েক মাস পর, রাশিয়া ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি করে। যদিও তাদের সৈন্যরা এখনও কোনো অঞ্চলেরই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি।
সূত্র আরো জানায়, ‘ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট দোনবাস ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।’
ইউক্রেনের মাটিতে লড়াই এখনো চলছে। কিয়েভ ও মস্কো একে অপরের ওপর ড্রোন হামলা চালাচ্ছে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার ভোরে খারকিভ ও সুমি অঞ্চলে রুশ হামলায় অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন।