শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ৫ নভেম্বর ২০২৪ (বাসস) : দায়িত্ব নিয়েই ডেঙ্গুকে ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস উল্লেখ করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধই প্রথম কাজ বলে ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
মশার ওষুধ পরীক্ষার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘মশক নিধনে যে স্প্রে ব্যবহার করা হয় সেটি আমি পরীক্ষা করতে চাই। এমন কোন স্প্রে আমি চাইনা যে স্প্রে দিলে মশা লাফ দিয়ে ওড়ে যাবে। মশা মরছে কি না সেটা দেখতে হবে, না মরলে সে ওষুধ আমি গ্রহণ করবো না। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গণসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধ সেল গঠনের নির্দেশ দেন কর্মকর্তাদের। যেখান থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসহ যাবতীয় খোঁজ খবর নেবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। প্রয়োজনবোধে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সর্বোচ্চ সুচিকিৎসা তদারকি করবেন খোদ মেয়রই।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দায়িত্বভার গ্রহণের পর চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘির পাড়স্থ চসিক লাইব্রেরী ভবনের সম্মেলন কক্ষে চসিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মেয়র এসব কথা বলেন।
নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে অভিযান চালানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে যে সচিবরা রয়েছে, তাদের উদ্যোগে সেখানে ডেঙ্গু হেল্প ম্যানেজমেন্ট সেন্টার থাকবে। সেখান থেকে সিরিয়াস রোগীগুলো আমরা সুনির্দিষ্ট হাসপাতালে সেবার ব্যবস্থা করবো। আমাদের মনে রাখতে হবে, যখনই কোনো জরুরি বিষয় আসে, সেটার উপর আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এখন জরুরি হচ্ছে ‘ডেঙ্গু এবং ক্লিনিং অ্যাকটিভিটিস’। এদিক দিয়ে আমাদের গুরুত্ব দিয়ে ওটার ওপর কাজ করতে হবে।
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান নিজে তদারকির কথা জানিয়ে মেয়র ডা. শাহাদাত বলেন, আমি নিজে সব স্পটে যাব। সকালে বেশিক্ষণ অফিসে থাকবো না। আধ ঘণ্টা, এক ঘণ্টা। এরপর আমি নিজেই বেরিয়ে যাব। পরিচ্ছন্নতা বিভাগের লোকজন, মশক নিধনের দায়িত্বে যারা আছে তারা আমার সঙ্গে থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ওয়ার্ডে ২ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছে। আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে তাদের স্বশরীরে দেখতে চাই। যদি কাউকে আমি না দেখি, আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলছি, আমাকে অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। কারণ আমি বারবার বলছি আমি এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য এ সিটি করপোরেশনে মেয়র হিসেবে এসেছি।’
নগরের সব ভবন মালিক ও ব্যবসায়ীদের নিজস্ব ভবন-প্রতিষ্ঠানের সম্মুখ অংশ নিজ দায়িত্বে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার আহ্বান জানিয়ে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘যে দোকানগুলো আছে, আপনাদের দোকানের সামনে ডাস্টবিন বসিয়ে দেব। আপনাদের দোকানের সামনেও যদি কোন ময়লা পড়ে থাকে তাহলে বিনে ওঠাবেন। নয়তো আমি আইনগত ব্যবস্থাতে যাব। হোল্ডিং ট্যাক্স নয়তো ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের অভিযান আমি নিজেই পরিচালনা করবো।
বাড়তি হোল্ডিং ট্যাক্সের দরকার নেই জানিয়ে আগের হোল্ডিং ট্যাক্সই সম্পূর্ণভাবে আদায়ে জোর দিয়ে এবং আগের হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করতে না পারার কারণ উল্লেখ করে নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্সগুলো আমরা নিতে পারছি না বিভিন্ন কারণে। আওয়ামী লীগ সরকারের অনেকেই হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছে। আগের যে হোল্ডিং ট্যাক্স দিত সেটাও এখন দিচ্ছে না। আমি জানি অনেকেই দিচ্ছে না। ৩০-৪০ শতাংশ দিচ্ছে না। তাই একটা জায়গায় এসে এগুলো আমাদের শেষ করতে হবে। শেষ করেই যেই জায়গায় হোল্ডিং ট্যাক্স আমরা দিতাম, আপনারা আগে যেটা দিতেন সেটাই একুরেট দেন।
রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের সাবধান করে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স আপনারা বিভিন্নভাবে চাচ্ছেন। আমি কিন্তু অনেক কিছু জানি, আমার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান আছে, আমার নিজের হসপিটাল আছে, আমার নিজের বাড়ি আছে; সেখানে কি হয় তার সবকিছু আমি জানি। তাই আপনারা সাবধান হয়ে যান। আমি কিন্তু বলছি সাবধান হয়ে যেতে হবে সবাইকে।’
তিনি বলেন. ‘আপনারা বেতন পাচ্ছেন সবাই। আপনারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবেন। আপনারা অনেকে হয়তো বছরে দুবার বোনাস পান না। যদি চসিককে সাবলম্বি করতে পারি আমরা ইনশাআল্লাহ সেটাও করবো। ওই দিকে আপনারা চিন্তা করেন। আমার অনেক কিছু করার ইচ্ছে আছে।’
‘সুস্থ মন, সুস্থ দেহ’ একদম হারিয়ে গেছে উল্লেখ করে ৪১টি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করার দৃঢ় ইচ্ছা প্রকাশ করেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আজকে টার্ফ হয়ে একটা শ্রেণি সেখানে তার বাচ্চাদের খেলতে দিতে পারছে না। এতে সমাজের মধ্যে একটা বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, একসময় দেখতাম মেমন হাসপাতালে রোগীর কোনো অভাব ছিল না। এটা চট্টগ্রামের ১ নম্বর হাসপাতাল ছিল। তাই আমি মেমন হাসপাতালকে আগের মতো ১ নম্বর জায়গায় দেখতে চাই। ৪১ ওয়ার্ডে ছোট ছোট যে ডিসপেনসারিগুলো আছে; এগুলো আরো এক্টিভ করতে হবে।
মেয়র ডা. শাহাদাত বলেন, শিক্ষাখাতের সেবচেয়ে বড় যেটা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি; এটি চসিকের টাকা দিয়ে কেনা। আজ এটা বেদখল হয়ে গেছে। আমরা যারা রাজনীতি করি; আমরা শুধু মুখে বড় বড় কথা বলি। যখন ক্ষমতা চলে যায় তখন ঘরে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। মানুষের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আমরা নিজের নামে করে ফেলি। এটাই হচ্ছে আমাদের বড় রোগ। এ জায়গা থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে। আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উদ্ধার করতে হবে। আপনাদের আমি কথা দিচ্ছি; এটা আমি করবো ইনশাআল্লাহ।