বাসস
  ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২২

হাজারো সমস্যায় জর্জরিত রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল

॥ মনসুর আহম্মেদ ॥
রাঙ্গামাটি,৮ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : হাজারো সমস্যায় জর্জরিত রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল। রাঙ্গামাটি শহরের উত্তর কালিন্দীপুরে অবস্থিত বর্তমান রাঙ্গামাটি সদর জেনারেল হাসপাতালটি ১শ’ শয্যায় উন্নীত করে তবলছড়ির আগের পুরাতন স্থাপনা হতে স্থানান্তরিত হয় ১৯৮৩ সালে।  

রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালটি ১শ” শয্যা বিশিষ্ট হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ফ্লোরে,বারান্দায় বসে, শুয়ে বাধ্য হয়ে  চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে প্রায় দুই থেকে তিনগুণ মানুষ।

দ্বিতলবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনের উপর তৃতীয় তলা সম্প্রসারণের ফলে ভবনটির নিচে কিছু অংশের বিভিন্ন জায়গায় ফাটলের সৃষ্টি হলে সেখানে টিন শেড করে রোগীদের সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করার পরেও রোগীদের সিট দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এতে করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবাসহ খাবার দিতে ভীষণ বেগ পেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী মোঃ এয়া রসুল বাসসকে জানান,প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সিট পাইনি, ফ্লোরেই ছিলাম। বর্তমানে হাসপাতালের পরিবেশ তেমন ভালো না। এখানে রোগী অনুযায়ী সিটের ব্যবস্থা নেই, হাসপাতাল জুড়ে নোংরা পরিবেশ,অপরিচ্ছন্ন টয়লেট ও বাথরুম। নেই উন্নত অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ শওকত আকবর বাসসকে জানান, ১শ” শয্যার রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ। এছাড়া প্রতিদিন আউটডোরে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে শত শত মানুষ। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে। তিনি জানান, বর্তমানে হাসপাতালের পাশে ১৫০ শয্যার একটি নতুন ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। নতুন ভবন চালু হলে রোগীদের আসন সংখ্যা বাড়বে এবং মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কর্মকর্তা।

রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা গেছে বর্তমানে সেখানে শিশু,মহিলা ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশী। শিশু ও গাইনি ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সিট না পাওয়ায় অনেক কষ্ট করে কোন রকম চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে রোগীরা। 

রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালের নানামুখী সমস্যার কথা স্বীকার করে রাঙ্গামাটি  সিভিল সার্জন ডাঃ নূয়েন খীসা বাসসকে বলেছেন, রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতাল ১শ শয্যার হলেও সেখানে প্রায় সময় রোগী থাকে দ্বিগুণ, সে কারনে বর্তমান জনবল কাঠামো দিয়ে আমাদের রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ১শ শয্যার হাসপাতালে ১শ রোগীর জন্য খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও হাসপাতালে দ্বিগুণের বেশী রোগী থাকার কারনে আমরা খাবার দিতেও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। সিভিল সার্জন জানান, খুব শীঘ্রই আমরা ১৫০ বেডের একটি অবকাঠামো পেতে যাচ্ছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ১৫০ বেডের অবকাঠামোর জন্য  বেড, ইন্সট্রুমেন্টসহ অন্যান্য যেসব সাপোার্টং প্রয়োজন সেগুলো আমরা খুব সহসা পাচ্ছিনা। যদি পাই তাহলে খুব সহজেই এটা চালু করতে পারবো। এছাড়া রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতো চিকিৎসক সংকট রয়েছে। কোন কোন উপজেলায় চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ২-৩জন। এরকম স্বল্প চিকিৎসক দিয়ে মানসম্মত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া উপজেলাগুলোতে রোগীদের  বেসিক সার্ভিস দেয়ার মতো প্রয়োজনীয় ইন্সট্রুমেন্ট নাই। এসব বিষয়গুলো নিয়ে আমি বারবার কর্তৃপক্ষকে আবহিত করে যাচ্ছি। 

তিনি বাসসকে আরো জানান, শুধুমাত্র রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতাল নয়। রাঙ্গামাটির অন্যান্য উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও রোগীদের প্রয়োজনীয় আসন সংকট,জনবল, যন্ত্রপাতিসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। এসব বিষয়ে সম্প্রতি আমি একটি মিটিংয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে অবহিত করেছি। তিনি বিষয়টি সমাধানের আশ^াস দিয়েছেন।

বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলা সদরে অবস্থিত ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একমাত্র সরকারি হাসপাতালটির অবস্থা খুবই নাজুক।হাসপাতালটি চলছে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসার যন্ত্রপাতিসহ নানাবিধ কারনে রোগীদের সুচিকিৎসা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। 

রাঙ্গামাটি জেলা শহরে রয়েছে ১শ” শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, জেলার নয়টি উপজেলায় রয়েছে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ১০ শয্যার একটি হাসপাতাল চালু রয়েছে।  

কিন্তু জনবল সংকট, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার কারণে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় স্বাস্থ্যসেবার মান অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।