শিরোনাম
জাহাঙ্গীর আলম
ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ (বাসস) : মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। মাওলানা ফারুকী ইসলামী ফ্রন্ট নেতা ও টেলিভিশনে ইসলামি অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় উপস্থাপক ছিলেন। তিনি সূফি মতদর্শ অনুসারী ছিলেন।
২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের ১৭৪ নম্বরের নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার বাসা থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তার ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে চলতি বছরের ৫ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার কে এম আবুল কাশেম ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলা প্রমাণের জন্য চার্জশিটে সাক্ষী করা হয়েছে ৩৩ জনকে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন।
তদন্তে ফারুকী হত্যাকাণ্ডে জামাই ফারুকসহ ১২ জনের সম্পৃত্ততা খুঁজে পেয়েছেন মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। এদের মধ্যে জামাই ফারুকমহ ছয় জনের নাম ঠিকানা খুঁজে না পেয়ে তাদের অব্যাহতির আবেদন করে চার্জশিট দাখিল করেছে সিআইডি। অপর দিকে চার্জশিটে জঙ্গি সদস্য হাদিসুরসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করেছেন সিআইডি।
তবে একই ঘটনায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের পক্ষে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার করা পিটিশন মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ায় ইসলামি বক্তা তারেক মনোয়ারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ছয়জন উপস্থাপককে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। অন্যরা হলেন-মুফতি কাজী মো. ইবরাহীম, কামাল উদ্দিন জাফরী, আরকানুল্লাহ হারুনী, খালেদ সাইফুল্লাহ বখশী ও মুখতার আহম্মদ।
চার্জশিটে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, নিহত নুরুল ইসলাম ফারুকী একজন সুফি মতবাদের অনুসারী এবং ইসলামি বক্তা ছিলেন। তিনি একজন মাজারের অনুসারী লোক ছিলেন। অপরদিকে আসামিরা জেএমবি মতাদর্শের লোক ছিল। তারা মাজার স্থাপন ও মাজারে প্রচলিত কার্যক্রমের পরিপন্থি মাতবাদ প্রর্বতন করেন। তৎকালীন সময়ে জেএমবি নামক সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম দেশব্যাপী চলমান ছিল। মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে তৎকালীন সক্রিয়া জঙ্গি সংগঠন জেএমবি (একাংশ) তথা জামাই ফারুক গ্রুপের জঙ্গীরা এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।
চার্জশিটে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট সময় সন্ধ্যায় ঢাকার আশুলিয়ায় অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের পাশে কামার পাড়ায় জঙ্গি নেতা জামাই ফারুকের সহযোগী ইমনের শ্বশুর বাড়িতে বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়। জেএমবি নেতা জামাই ফারুক, মাহমুদ ইবনে বাশার, রতন চৌধুরী ইঞ্জিনিয়ার রিপন ও রাকিব ওরফে রিয়াজ, নাঈম, হাদিসুর রহমান সাগর জুলফিকার ওরফে সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস, আবু আল বাঙ্গালী আব্দুল্লাহ স্যার ওরফে তৌফিক আমজাদ, আব্দুল্লাহ আল তাসনিম, নাহিদ (৩৫), ইমন, রফিকুল ইসলাম রুবেল, সরোয়ার জাহান মানিক, হাফেজ কবির, মো. মাশতাক ই মাতম ও মোস্তাফিজুরসহ অন্যান্য জঙ্গিরা পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ঘটনার দিন ভিকটিম নূরুল ইসলাম ফারুকীকে মতাদর্শের পার্থক্যের কারণে তার নিজের বাসায় খুন করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর ওরফে জুলফিকার ওরফে সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস ওরফে আবু আল বাঙ্গালী ওরফে আব্দুল্লাহ স্যার ওরফে তৌফিক আমজাদ (৩৫), আব্দুল্লাহ আল তাসনিম নাহিদ (৩৫), রফিকুল ইসলাম ফারদীন (৩১), আবু রায়হান মাহমুদ আব্দুল হাদী (২৫), মাহমুদ ইবনে বাশার (৩২), রতন চৌধুরী ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রিপন ওরফে রাকিবুল ইসলাম রিয়াজ (৩৩)।
এরমধ্যে আসামি মাহমুদ ইবনে বাশার, আবু রায়হান ও রফিকুল ইসলাম রুবেল পলাতক। অপর দিকে জামাই ফারুক, নাঈম, ইমন, হাফেজ কবির আশফাক ই আজমদ ও খোরশেদ আলমদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় আপাতত অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ভবিষ্যতে তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া গেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ফয়সাল ফারুকী বাসসকে বলেন, আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছেন তাদের আইনের আওতায় এনে যেন শাস্তির মুখোমুখি করা হয়। তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় এ প্রত্যাশা করছি। ঘটনার সাঙ্গে যারা জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আমি ন্যায় বিচার চাই।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার কে এম আবুল কাশেম বাসসকে বলেন, মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে তৎকালীন সক্রিয়া জঙ্গি সংগঠন জেএমবির (একাংশ) তথা জামাই ফারুক গ্রুপের জঙ্গিরা মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীকে নিজ গৃহে হত্যা করে।হত্যার পর তার বাপসা থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তদন্তে ১২ জনের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছি। এই ১২ জনই জঙ্গি গ্রুপের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে ছয় জনের নাম ঠিকানা না পেয়ে তাদের অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেছি। ভবিষ্যতে তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া গেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।