কুষ্টিয়ার মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল দেশের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিদেশে

বাসস
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৩৯
কুষ্টিয়ার মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল দেশের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিদেশে। ছবি: বাসস

কুষ্টিয়া, ১০ জানুয়ারি ,২০২৫ (বাসস): কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্প। মৃৎশিল্পের বাজার এখন দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যসামগ্রী। তবে এখনো মাটির আধুনিক মানের তৈজসপত্র তৈরি করছেন জেলার কুমারখালী উপজেলার কল্যাণপুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির সদস্যরা। এখানকার উৎপাদিত পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।

কুমারখালীর উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামে ৪০ জন সদস্য মিলে গড়ে তুলেছেন কল্যাণপুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৬০-৭০ জন নারী-পুরুষ মৃৎশিল্পী ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কেউ মাটি আর পানি দিয়ে কাদা তৈরি করছেন কেউ থালা, বাটি, মাটির ব্যাংক, চায়ের কাপ ও গ্লাস তৈরি করছেন। কেউ কেউ শুকানোর পর তা যত্ন সহকারে পরিষ্কার করছেন।

সমিতির দায়িত্বরত ম্যানেজার রাজকুমার বাসসকে বলেন, এই শিল্পের অতীত ঐতিহ্য খুবই সমৃদ্ধশালী। একসময় ঘরে ঘরে হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থালি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হতো মৃৎশিল্পের নানান তৈজসপত্র। আমরা এখানে মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করি। তিন বছর ধরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন চৈতালি দাস। তার স্বামী মারা গেছেন। একটা মেয়ে আছে। তাই কোনো উপায় না পেয়ে সংসার চালাতে এই কাজ বেছে নিয়েছেন। চৈতালি বাসসকে জানান, এ কাজ করে মাসে তিনি তিন হাজার টাকা আয় করছেন।

রানী নামের আরেক শ্রমিক বলেন, এখানে কাজ করে মাস শেষে যে বেতন দেয় তার তিন ভাগের এক ভাগ যাতায়াতেই খরচ হয়ে যায়। টানাটানির মধ্যে সংসার চালাতে হয়। মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনতে আসা আব্দুল লতিফ বাসসকে বলেন, মৃৎশিল্প বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। তবে এখন সেসব পণ্য নেই বললেই চলে। তাই কিছু পণ্য কিনতে এসেছি।

কল্যাণপুর মৃৎশিল্পের পরিচালক বটোকৃষ্ণ পাল বাসসকে জানান, আমার এই প্রতিষ্ঠানে ৬০ থেকে ৭০ জন শ্রমিক কাজ করেন। বর্তমানে দেশের চেয়ে বর্হিবিশ্বে এই শিল্পের বেশ চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে অনেক চাহিদা তৈরি হয়েছে। মফিজুল ইসলাম নামের ঢাকার একজন ব্যবসায়ী এখান থেকে পণ্য নিয়ে কাতারে রপ্তানি করেন। হাসান নামের আরেক ব্যবসায়ী

রপ্তানি করেন সৌদি আরব। অপর দুজন ব্যবসায়ী এখানকার পণ্য নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান। তবে গতানুগতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এই শিল্প বেশি দিন ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব।

তিনি আরও বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন দরকার আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। কিন্তু প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে তাদের পক্ষে এসব আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে চাহিদা মোতাবেক পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছি। বারবার আবেদন নিবেদন জানানোর পরও সমবায় অধিদপ্তর কিংবা সরকারি কোনো দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যাচ্ছে না।

কুষ্টিয়া জেলা সমবায় অফিসার আনিছুর রহমান বাসসকে বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের ব্যবহার কমে গেছে অনেকাংশে। এ শিল্পের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী। তবে আশার কথা কুষ্টিয়ার তৈরি মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্র আবারও নতুন করে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।

তিনি জানান, এই শিল্পের উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিতে একটি প্রকল্প ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে তা এখনো অনুমোদন হয়নি। আশা করছি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই মৃৎশিল্পের হারানো গৌরব ফিরে পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
২১ জুলাই : কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল, সারাদেশে সংঘর্ষে আরও ১৯ জন নিহত
শাহজালাল বিমানবন্দরে ১৫৭৭ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার : আটক ২
গণ-অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশে নতুন করে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে : নাহিদ ইসলাম
শিল্পকলায় জার্মান নাট্যকার ব্রেখটের 'ব্যতিক্রম এবং নিয়ম'-এর দ্বিতীয় সফল মঞ্চায়ন
সিরিয়া-ইসরাইল যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানালো ইইউ, নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদানের আহ্বান
সিরিয়ার দ্রুজ-প্রধান এলাকায় সহিংসতায় নিহত বেড়ে ৯৪০ : পর্যবেক্ষক সংস্থা
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সবাই মিলে জাতীয় ঐক্য করব : জাতীয় সমাবেশে জামায়াত আমির 
শহীদ সাংবাদিক তুরাবের শাহাদাত বার্ষিকীতে দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি
চরমপন্থা পুনর্বাসন রোধে সজাগ থাকার আহ্বান তারেক রহমানের
১০