শিরোনাম
আসাদুজ্জামান
সাতক্ষীরা, ১১ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : জেলায় এবার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে আবাদ হয়েছে সরিষার। যেদিকে দু’চোখ যায় সেদিকে শুধু হলুদের সমারোহ।
সরিষার হলুদ ফুলের সুগন্ধে মন ভরে উঠে। এরই মধ্যে জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার মৌ চাষীরা বিভিন্ন গ্রামের সরিষা ক্ষেতের মধু সংগ্রহের জন্য বাক্স স্থাপন করেছেন।
সাতক্ষীরায় সরিষা ক্ষেতে কাঠের বাক্সে মৌমাছি পালন করে মধু উৎপাদন ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই মধু বিদেশে রপ্তানী করতে পারলে প্রচুর বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন হবে বলে আশাবাদী মধু চাষীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ১৭ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। মধু আহরনের জন্য জেলায় এপর্যন্ত সরিষার ক্ষেতে ২৯ জন মৌচাষী ৫ হাজারের বেশি মৌ-বক্স বসিয়েছেন। এবার জেলায় মধু উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ মেট্রিক টন।
কলারোয়া উপজেলার আলাইপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, এবার সরিষা মৌসুমে জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌ চাষীরা তাদের এলাকার বিভিন্ন গ্রামের সরিষা ক্ষেতের মাঠে মধু সংগ্রহের জন্য বাক্স স্থাপন করেছেন।
আশাশুনি থেকে আসা মৌচাষি আমিরুল গাজী জানান, সরিষা ক্ষেত থেকে বছরে তারা চারমাস মধু সংগ্রহ করে থাকেন। বাকি আটমাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছি লালন পালন করা হয়। গত বছরের মে মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মৌমাছি লালন পালন করতে তার প্রায় সাতলাখ টাকা খরচ হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। তখন সর্বত্র সরিষার ফুল ফোঁটে। আকার ভেদে একটি বাক্সে ৩০-৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়।
তিনি জানান, তার সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষের বিশেষ বাক্স কলোনি রয়েছে ১০০টি। প্রতিটি কলোনিতে খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। আর প্রতি কেজি মধু বিক্রি হয় তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা। প্রতি কলোনিতে তার লাভ হয় প্রায় পাঁচহাজার টাকা। এছাড়া, মধু চাষের ফলে সরিষার ফলন বৃদ্ধি পায় এবং পোকামাকড় আক্রমণ কম করে বলে তিনি জানান।
সদর উপজেলার তলুই গাছা গ্রামের কৃষক মাহবুবুর রহমান ও আশরাফ আলী জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ফসলের কোন রোগ বালাই হয়না। বরং মৌমাছির পরাগায়ণের ফলে সরিষার ফলন এবার ১৫ থেকে ২০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মধু ব্যবসায়ী মোশারাফ হোসেন জানান, তিনি শহরের অদূরে বিনেরপোতা বিসিক শিল্প নগরীতে মধু প্রক্রিয়াজাত করন মেশিন স্থাপন করেছেন। স্বল্পমুল্যে তিনি এখানে মধু প্রক্রিয়াজাত করেন।
জেলায় কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম জানান, বিগত বছর জেলায় ১৯ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে এর আবাদ হয়েছিল। এবছর সরিষার আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমিতে। গত বছর এ জেলা থেকে ৭৫ মেট্রিকটন মধু উৎপাদন হয়েছিল। এবছরও লক্ষ্যমাত্রা ৭৫ মেট্রিকটন ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামীতে যদি পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ফুল সমৃদ্ধ ফসল আবাদ করা যায় এবং সারাবছর যদি এই ফুলের সমারোহ ঘটানো যায়, তাহলে মধু চাষ করে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে।