শিরোনাম
ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন
নাটোর, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় তারুণ্য নির্ভর উদ্যোগের সফলতা এসেছে শুধু পাবদা মাছ উৎপাদনেই নয় রপ্তানীতেও। পুকুরে পাবদা মাছ চাষের জন্যে নতুন প্রযুক্তির সংযোজন করে সফলতা আসে।
এরপর আর পেছনে ফিরে যেতে হয়নি। দেশের সীমানা পেরিয়ে উৎপাদিত পাবদা মাছ প্রতিবেশী দেশের বাজারে যাচ্ছে।
হোসেন এগ্রোর সূচনা করেন দেড় দশক আগের তরতাজা যুবক ইমন। সঙ্গে নিজের আরো দুই ভাই ফেরদৌস আর অলিভ। গতানুগতিক মাছ চাষে মুনাফাও ভালো। কিন্তু মাথার মধ্যে নতুন কিছু করার ভাবনা। ২০১৫ সালে চায়না থেকে আমদানী করলেন উন্নত প্রযুক্তির এ্যারেটর।
ইমন বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে মাছ চাষে শুধু মাছের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়, পানি থাকে উপেক্ষিত। মাছের আবাসস্থল পানির পরিবেশ সব সময় ঠিক থাকে না। এ্যামোনিয়াসহ অন্যান্য রাসায়নিক ও জীবাণুর বিষক্রিয়া, অক্সিজেনের অভাব ইত্যাদি কারণে মাছের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়। অনেক সময় দূষিত পানিতে মাছের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। ফলে মাছের মৃত্যু হয়। উন্নত এ্যারেটর ব্যবহার ছাড়া পুকুরে পাবদা মাছ চাষ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। সংবেদনশীল মাছ অক্সিজেনের ঘাটতি বা পানির বিষক্রিয়ায় মরতে শুরু করলে সব শেষ।
বিদ্যুৎ বা সোলারের মাধ্যমে পুকুরের পানিতে চালিত মটর নির্ভর এ্যারেটরের পাখা ঘুরতে ঘুরতে পানিতে কম্পন তৈরী করে। ফলে পানিতে ফাইটোপ্লাংটনের সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি হয় অক্সিজেন। এ্যামোনিয়াসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিকযুক্ত পুকুরের নিচের পানি উপরে উঠে আসে এবং সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে মারা যায়। এ্যারেটর ব্যবহারের মাধ্যমে পানির গুণগত মান নিশ্চিত হয়। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও শ্যাওলা জন্মাতে পারে না, মশার উপদ্রব্য থেকে রক্ষা হয়, এ্যামোনিয়া গ্যাসের বিষক্রিয়া থেকে মাছের জীবন রক্ষা পায়। অল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ সম্ভব হয়। পানির অনুকূল পরিবেশে মাছ বিচরণ করে। এ্যারেটরের পাখার মাধ্যমে পানিতে কম্পন সৃষ্টি হওয়ায় মাছের ছুটাছুটি বৃদ্ধি পায়। মাছ স্বাভাবিক খাবার খায় বলে অপচয় রোধ হয় ও দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে বলে জানান ইমন।
অলিভ জানান, শুধু এ্যারেটর ব্যবহারই নয়, হোসেন এগ্রোতে শুরু করা হয় উচ্চ ঘনত্বে পাবদা মাছ চাষ। ২০১৫ সালে পাঁচ টন পাবদা আর আধা টন বাংলা মাছ অর্থাৎ রুই-কাতলা রপ্তানী করা হয় ভারতে। তবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় প্রযুক্তির সাথে মেলবন্ধন আরো জোরদার হয়েছে। বর্তমানে অধিক উচ্চ ঘনত্বে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে ১০টা মাছে ওজন হচ্ছে এক কেজি, আগে ছিলো ১৫টা মাছের ওজন এক কেজি। আগে প্রতি বিঘায় দুই টন পাবদা পাওয়া গেলেও এখন পাওয়া যাচ্ছে দেড় টন। তবে বড় মাছের দাম বেশী। প্রতি কেজি চারশ’ থেকে সাড়ে চারশ’ টাকা। হোসেন এগ্রোতে পাবদার সাথে এক বিঘা আয়তনের পুকুরে আমরা এক কেজি ওজনের ১০০টি করে রুই ও সিলভার, ৩০০টি মৃগেল, ২১টি কাতল, ৫০টি বৃগেট মাছ চাষ করছি। এক বিঘা পুকুরে ১২ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে আট লক্ষ টাকা মুনাফা পাওয়া সম্ভব।
হোসেন এগ্রোতে শুধু উন্নত প্রযুক্তির সমারোহ পাবদা মাছ চাষেই নয়, কৃষিতেও। ৫০ বিঘার এ খামারে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে পেঁয়াজ ও রসুন। অসময়ে উৎপাদনে খ্যাত ভিয়েতনাম ২০০ কাঁঠাল, ৩০০টি ফিলিপাইনের আনারস এবং হাজারের উপরে কাটিমন আম গাছ। প্রতিদিন খামারে কাজ করছেন ছয়জন। তাদের মধ্যে অনেকেই মাসে ১২ হাজার টাকা পান। এছাড়া প্রতিদিন এ খামারে কাজ করছেন গড়ে ১০ জন করে শ্রমিক।
মাছ চাষ বিশেষ করে অপার সম্ভাবনাময় পাবদা মাছ চাষে প্রযুক্তির ব্যবহারকে জনপ্রিয় করা এবং রপ্তানির পরিধি বৃদ্ধিতে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা জানান অলিভ।
নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ পরিচালক ড. জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, হোসেন এগ্রো মাছ চাষের পাশাপাশি ফল ও সবজি চাষও সম্ভাবনাময়। আমরা তাদের সঙ্গে আছি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাবদা মাছ চাষে সফলতা পেয়েছে হোসেন এগ্রো। রপ্তানি খাতেও অবদান রাখছে। তাদের কার্যক্রম অনুকরণীয়। ঈর্ষনীয় এ অগ্রযাত্রা আগামীতে অব্যাহত থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।